মিয়ানমারে ‘অপারেশন দশ সাতাশ’ শুরুর পর বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী সামরিকভাবে যেভাবে জান্তাকে কাবু করে ফেলেছে, সেটি নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। কিন্তু গত রোববার তার থেকেও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। ইয়াঙ্গুনের চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ভাষায় ‘উত্তরাঞ্চলীয় সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র দিয়ে মিয়ানমারকে ধ্বংস করতে চাইছে বেইজিং।
বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠন দুটির নাম বাংলায় এ-রকম– দেশপ্রেমিক ভিক্ষু পরিষদ এবং মিয়ানমার জাতীয়তাবাদী সংঘ। দুই সংগঠনই সামরিক জান্তার ঘনিষ্ঠ। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সামরিক বাহিনীর পক্ষ নিয়ে তারা অং সান সু চি ও তাঁর দল কিংবা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। কিন্তু রোববারের আগে কখনও চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা-সমর্থক সংবাদমাধ্যমগুলোকেও দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ বেইজিংয়ের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে। জান্তা সমর্থক সংগঠন ও সংবাদমাধ্যম বরাবরই চীনের ‘উপযুক্ত ভূমিকা’ নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বরং এনএলডিসহ জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো বেইজিংয়ের মিয়ানমার নীতির সমালোচনা করে এসেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও ইয়াঙ্গুনের চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল এনএলডি সমর্থকরা। এবার তাহলে কী ঘটল?
জান্তাপন্থিরা যাদের ‘উত্তরাঞ্চলীয় সন্ত্রাসী’ বলছে, তারা মূলত শান স্টেটের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এর একটি কোকাঙ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ বা এমএনডিএএ। এ নৃগোষ্ঠী মিয়ানমারের শান স্টেটের পাশাপাশি চীনের ইউনান প্রদেশেরও বাসিন্দা। অপর গোষ্ঠীটির নাম ‘টাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ বা টিএনএলএ। টাঙ নৃগোষ্ঠী মিয়ানমার ছাড়াও চীন ও থাইল্যান্ডের অধিবাসী। দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন স্টেটের ‘আরাকান আর্মি’। শান ও রাখাইন স্টেটের অবস্থান যদিও মিয়ানমারের দুই প্রান্তে; জান্তার নিপীড়ন থেকে বাঁচতে একুশ শতকের গোড়ার দিকে রাখাইনরা শান স্টেটে গিয়েছিল। দুই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখাইনে ফিরে সামরিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই থেকে দুই স্টেটের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও আদান-প্রদান অব্যাহত। সম্প্রতি এই তিন গোষ্ঠী মিলে গঠন করে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ বা ভ্রাতৃজোট।