জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। ইউএনআরডব্লিউএর সাবেক এ প্রধান তার বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী চলমান সহিংসতার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক শরণার্থী সংকটের নানা দিক তুলে ধরেন। আর এতে উঠে এসেছে ‘বাস্তুচ্যুতদের’ দুর্দশার কথাও।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ৪০ লাখ। ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সঠিকভাবে লক্ষ করেন যে এটি বর্তমান বিশ্বের গুরুতর সংকটের একটি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘শান্তি ও নিরাপত্তা যখন বিঘ্নিত হয়, তখন মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় অথবা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে।’ তার মতে, নৃশংস যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা সংঘাতই এ বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ।
গত কয়েক সপ্তাহের সহিংসতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের মৌলিক নিয়ম যেমন “আন্তর্জাতিক মানবিক আইন” উপেক্ষা করা ক্রমবর্ধমানভাবে আদর্শ হয়ে উঠেছে।’ এছাড়া ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলা এবং ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নিহত নিরপরাধ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সংখ্যা নজিরবিহীন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। গাজা উপত্যকার অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
আলোচনা সভায় তিনি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন যে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের নেতৃত্বে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্দশা কমাতে সক্ষম হয়েছে এমন কোনো বাস্তবসম্মত নজির নেই। ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনির মন্তব্যের দিকেও মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়, যিনি বিদ্যমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে “পৃথিবীতে নরক বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এ সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তা হচ্ছে মানবিক যুদ্ধবিরতি এবং গাজার অভ্যন্তরে মানবিক সহায়তার উল্লেখযোগ্য সরবরাহ, যা ‘ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং প্রাণহানির চলমান চক্র’ হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউএনএইচসিআরে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে আরো বলা হয় যে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ শোচনীয় যুদ্ধ পরিস্থিতির পরিবর্তন অত্যাবশ্যক।
জাতিসংঘের হাইকমিশনার সুদানে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে একসময় শান্তিপূর্ণ অনেক মানববসতি ছিল। তবে এখন দেশটিসহ তার আশপাশের অঞ্চলগুলো কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। এ চলমান সংঘাত সুদানের জনগণের জন্য মর্মান্তিক পরিণতি বলে মনে করেন তিনি। বলাবাহুল্য, চলমান লড়াই কিংবা সহিংসতার পরিধি ও নৃশংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি সাধারণ মানুষকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। দেশটির প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এর মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ নিকটবর্তী দেশগুলোয় পালিয়ে গেছে। কেউ কেউ এরই মধ্যে লিবিয়া ও তিউনেসিয়ায় প্রবেশ করেছে। অনেকে আবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিসহ ইউরোপের অন্য দেশগুলোর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পরে শিগগিরই যুদ্ধবিরতি বা সংঘাত পরিস্থিতির সুরাহা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘের এই হাইকমিশনার।