বাংলাদেশে এত সুন্দর গ্রামও আছে! একটা গ্রামে গিয়ে পথে-পথে ঘুরে, আঙিনায় ঢুকে, রান্নাঘরের পেছনে ঢুঁ মেরে, শিশু আর কিশোর, নারী আর পুরুষ, কৃষক আর কর্মজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে ঢাকায় ফিরেছি। গ্রামের নাম মহাদেবপুর। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। উপজেলা শহর থেকেও বেশ খানিকটা দূরে।
১০ নভেম্বর ২০২৩ আমরা গিয়েছিলাম এ গ্রামে। গিয়েছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, প্রথম আলোর চিফ ডিজিটাল বিজনেস অফিসার জাবেদ সুলতান, চলচ্চিত্র নির্মাতা রেদোয়ান রনি ও তাঁর শুটিং দল। খুলনা থেকে এসেছিলেন আলোকচিত্র সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন। ছিলেন ঝিনাইদহ প্রতিনিধি আজাদ রহমান। উদ্দেশ্য ছিল, প্রথম আলোর রজতজয়ন্তী উপলক্ষে একটা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের শুটিং। মতিউর রহমানকে ক্যামেরার সামনে অসহায় অবস্থায় রেখে আমি আর জাবেদ সুলতান হাঁটতে শুরু করলাম গ্রামের একমাত্র পথটা দিয়ে।
আপনারা কি কেউ ব্যালাড অব আ সোলজার সিনেমাটা দেখেছেন? এটা আমার দেখা সবচেয়ে ভালো সিনেমা। ওই সিনেমা শুরু হয় একটা সড়কে। একজন শহীদ যোদ্ধার মা সেই পথে দাঁড়িয়ে থাকেন। বলা হয়, এটা হলো এ গ্রামে ঢোকা ও গ্রাম থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ। এ পথ দিয়ে এক তরুণ যুদ্ধে গিয়েছিলেন। এই মা অপেক্ষা করেন। ছেলে আর আসেন না।
কালীগঞ্জের দুটো গ্রাম—বেজপাড়া আর মহাদেবপুরের চার হাজার অধিবাসীর গ্রামে ঢোকার আর বেরোনোর পথ মাত্র একটা। ১৫ বছর আগে এ সড়কের অবস্থা ছিল অবর্ণনীয়। বর্ষাকালে পুরোটা পথ হয়ে পড়ত কর্দমাক্ত। তিন মাস কেউ আর এ পথ দিয়ে চলাচল করতে পারত না। স্কুলের শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকত বছরের তিন মাস।
মহাদেবপুর গ্রামের অনিতা বিশ্বাস চাকরি করেন উপজেলায় সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে। তাঁকে উপজেলায় যেতে হতো। তিনি আমাদের বলছিলেন সেই সময়ের দুর্দশার কথা। রোজ একটা শাড়ি পরে আরেকটা শাড়ি পলিথিনের থলেতে নিয়ে বের হতেন তিনি। এই রাস্তাটুকু পার হতে না হতেই পুরো শাড়িতে কাদা লেগে যেত। বড় রাস্তায় উঠে তিনি কারও বাড়িতে ঢুকে শাড়ি পাল্টাতেন। তারপর যেতেন অফিসে।