কিছুদিন আগেও ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুরোধ নিয়ে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ছুটেছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এমনকি ব্যাংকের এমডিসহ শীর্ষ নির্বাহীদেরও এ নিয়ে উদ্যোক্তাদের কাছে থাকত বিশেষ অনুরোধ। এ চিত্র পুরোপুরি উল্টে দিয়েছে ডলার সংকট। এখন আমদানি চালু রাখতে প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান ও এলসি খোলার অনুরোধ নিয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের কাছে ছুটে আসতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ব্যাংকে সফলভাবে এলসি খোলা নিশ্চিত করাটাও এখন আমদানিকারক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি-পরিচালকদের অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলমান ডলার সংকট ও এলসি বিড়ম্বনাকে এখন শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন দেশের প্রথম সারির উদ্যোক্তারা। তাদের ভাষ্যমতে, একদিকে উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগ্যপণ্যের বিক্রিও কমছে। আবার বিদেশী রফতানিকারকরাও এখন দেশের আমদানিকারকদের ওপর সময়মতো মূল্য পরিশোধ নিয়ে আস্থা রাখতে পারছেন না। আগে এলসি খোলার বিষয়টি উদ্যোক্তা বা শীর্ষ নির্বাহী পর্যন্ত কখনই যেত না। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় তাদেরই এখন ব্যাংকে গিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এর পরও ব্যাংকগুলো এখন এলসি খুলতে নানা ধরনের শর্ত দিচ্ছে। এমনকি অনেক সময় বাইরে থেকে ডলার সংগ্রহ করে দিতেও বলা হচ্ছে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর অন্যতম চট্টগ্রামভিত্তিক টি কে গ্রুপ। গ্রুপটির পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এখন তো ব্যাংকাররা আর আমাদের কাছে আসেন না। বরং আমাদেরই ব্যাংকারদের কাছে ছুটে যেতে হচ্ছে। কারণ আমার যেহেতু চাহিদা আছে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। এলসি খুলতে পদক্ষেপ নেয়াটা এখন এমডি-পরিচালকদেরও মুখ্য কাজ হয়ে গেছে। অথচ আগে এ ধরনের বিষয় কখনই পরিচালক পর্যায়ে আসত না। এলসি খোলাটা আসলে চিন্তার বিষয় হওয়ারও কথা না। কিন্তু ডলার সংকটে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা অনেক বাড়ায় চিত্রটা বদলে গেছে। আবার তারাও যে সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে না, সেটাও বলব না। আসলে আমার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারে কখনো চিন্তাও করিনি যে এলসি খুলতে এত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এখন বড় আরেকটা সমস্যা হলো বিদেশী রফতানিকারকরা বাংলাদেশীদের সঙ্গে ডিল করতে ভরসা পায় না। নানা ধরনের প্রশ্ন করে যেগুলো আগে কখনো শুনতে হয়নি।