পুরাতন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার পেছনে কতটা অশুভ উদ্দেশ্য কাজ করেছে তা অনেকেই জানে না। সরকার যদি সত্যি সত্যি শিক্ষার মানের উন্নতি চাইত তাহলে তারা শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানিত ও আকর্ষণীয় করত, শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ না কমিয়ে বরং বাড়াত, বিনামূল্যে যে বইগুলো দেওয়া হয় সেইসব বইয়ের কাগজের মান, ছাপার মান, ছবির মান, বিষয়বস্তুর মান এত নিম্নমানের হতো না।
তাছাড়া বাংলা মাধ্যমের মান বৃদ্ধির জন্য বেশি অগ্রাধিকার পায় কোন জিনিসটি? শিক্ষাক্রমের আগে শিক্ষকের মান বাড়ানো জরুরি। শিক্ষকের মান পরিবর্তন বা বাড়ানোর আগে তাদের উন্নত বেতন ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।
অনেক কোচিং সেন্টারে ভালো মানের শিক্ষক আছে। কী করলে তাদের মতো শিক্ষক স্কুলে নিয়ে আসা যায় সেই ব্যবস্থা করুন। তবে এই ধরনের সম্মান ও সম্মানিতে কোনো ভালো মানের শিক্ষক এই পেশায় আসবে না। শিক্ষক হয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, এমপির দ্বারা অসম্মানিত হতে কারও ভালো লাগে না। এখন যে বেতন কাঠামো আছে এই বেতন কাঠামো রাখলে শিক্ষকদের কোনো না কোনো পথ বের করে জীবন বাঁচানোর জন্য বিকল্প আয়ের রাস্তা খুঁজতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি হাতে পেলাম। নবম শ্রেণিতে উঠে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৫৮ পৃষ্ঠার ৩ চ্যাপ্টার পদার্থবিজ্ঞান পড়বে। প্রথম চ্যাপ্টারে নিউটনের সূত্র, দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে তাপমাত্রা ও তাপ আর তৃতীয় চ্যাপ্টারে পড়বে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান যেখানে আছে তরঙ্গ-পার্টিকেল ডুয়ালিটি, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার প্রিন্সিপাল ইত্যাদি।
ওই বইয়ের বাকি চ্যাপ্টারে আছে রসায়ন ও জীববিজ্ঞান। একই দেশের ইংরেজি মাধ্যমের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২১৬ পাতার ৮ চ্যাপ্টারের পদার্থবিজ্ঞানের বই পড়ে; যেখানে থাকে ইউনিটস এবং মেজারমেন্ট, ইলেক্ট্রিসিটি, ফোর্সেস অ্যান্ড মোশন, রশ্মি এবং তরঙ্গ, আর্থ অ্যান্ড স্পেস, এনার্জি, ম্যাগনেটস অ্যান্ড কারেন্ট, এটমস অ্যান্ড নিউক্লেই প্রভৃতি পড়বে। অর্থাৎ ইংরেজি মাধ্যমের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যা পড়বে বা জানবে নতুন কারিকুলামে আমাদের বাংলা মাধ্যমের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও তা পড়বে বা জানবে না।