মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো সবসময় কার্যকর হয় না। মূলত উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোয় এ নীতি বেশি ব্যবহার হয়। যেসব দেশে জনগণ শতভাগ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, সেসব দেশে এসব নীতি কার্যকর হয়। সুদের হার বাড়ানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোগ কমিয়ে নিয়ে আসা। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব নীতির বাস্তবায়ন করে। এ নীতির মাধ্যমে ভোগের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কারণ তখন মানুষের হাতে অর্থের প্রবাহ সীমিত থাকে।
যেসব দেশের অর্থনীতি উন্নত সেখানে ভোক্তার চাহিদা থাকে ঊর্ধ্বমুখী। তাই সেসব দেশে ভোগের চাহিদায় লাগাম রাখতে সুদের হার বৃদ্ধি করা হয়, যাতে ভোক্তার হাতে কম অর্থ প্রবাহ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এসব নীতি অনুসরণ করে। অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের অনুসরণ করে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। আমরা যদি সুদের হার বৃদ্ধি করি তাহলে ভোগের চাহিদা হয়তো কিছুটা সীমিত হবে তবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগও কমে যাবে। আর বিনিয়োগ কমে গেলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমবে, যার ফলে দেশে বেকারত্ব বাড়বে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আশানুরূপ হারে বৃদ্ধি পাবে না। ফলে দেশের বেসরকারি খাত নিরুৎসাহিত বোধ করবে এবং বিনিয়োগ সীমিত হয়ে আসবে। বিনিয়োগ কমে গেলে আমাদের সরবরাহে ভাটা পড়বে। এভাবে সরবরাহ কমতে থাকে তাহলে এমনিতেই মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল। এখানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে সরবরাহ বৃদ্ধি হয়। আমাদের দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ এমপ্লয়েড অর্থনীতিনির্ভর নয়, এখানকার অর্থনীতি শক্তিশালী করতে বিনিয়োগের ওপর জোর দিতে হবে। তাই আমার মনে হয়, বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের সুদের হার কমিয়ে রাখা উচিত। এখন আমরা যদি সুদের হার না কমিয়ে বৃদ্ধি করি তাহলে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, আর উৎপাদন ব্যয় বাড়লে এমনিতেই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তো মূল্যস্ফীতিটা থেকেই যাচ্ছে।
আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতির মূল কারণ হচ্ছে আমাদের লেনদেনে ঘাটতি। আমাদের যদি লেনদেন ঘাটতি চলতে থাকে তাহলে আমাদের রিজার্ভ কমে যাবে। আর রিজার্ভ যদি কমতে থাকে তাহলে আমাদের টাকার মান কমে যাবে। এক্ষেত্রে টাকার মান যদি কমতে থাকে তাহলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। মূলত বাংলাদেশে এ কারণেই মূল্যস্ফীতি হচ্ছে।