লিপস্টিকের উদাহরণ এক বড় পরিহাস

যুগান্তর ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২২

দেশের মানুষ কেমন আছে? বলতে হয় সুখেই আছে। তা না হলে একজন মন্ত্রী কেন বলবেন গ্রামে মেয়েরা দিনে তিনবার লিপস্টিক ব্যবহার করে। দিনে কয়েকবার স্যান্ডেল বদলের কথাও উঠেছে। বর্তমান সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানে প্রভূত উন্নতি হয়েছে, এমনটি বলতে গিয়ে সাধারণ মানুষের নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হাজির করেন। যে মন্ত্রী লিপস্টিকের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তার জন্য মিডিয়াতে উল্লেখযোগ্য কোনো সমালোচনা চোখে পড়েনি। অথচ বিএনপির শাসনামলে একজন মন্ত্রী যখন বলেছিলেন, ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন’, তখন তাকে পত্রপত্রিকায় তুলোধোনা করা হয়েছে। এমনকি আজকের দিনেও নানাভাবে প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়। দুঃখের বিষয় হলো মিডিয়া যে কোনো কারণেই হোক না কেন, সংবাদ পরিবেশনে এবং সংবাদ পর্যালোচনায় পক্ষাবলম্বন করছে। সাংবাদিকতায় এটি বিরাট পদস্খলন। সাংবাদিকরা সবাই মিলে খারাপ হয়ে গেছেন এমন কথা বলা যায় না। তাই যদি হতো তাহলে এত সাংবাদিক ডিজিটাল সিকিউরিটির মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন কেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরা মফস্বলের সাংবাদিক। রাজধানী ঢাকার সাংবাদিকদের তুলনায় এদের সঙ্গে ক্ষমতাধরদের যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই তারা আত্মরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। বাংলাদেশের সমাজে ধন-দৌলত বাড়ি-গাড়ি ও সোনা-রূপার মতো সম্পদ ছাড়াও আরও এক ধরনের সম্পদ আছে যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু তার অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। এ সম্পদটি হলো সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিধর ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারা। এসব যোগাযোগে একটি পক্ষ থাকে দুর্বল এবং অন্য পক্ষটি হয় প্রবল। এ দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগে কেবল দুর্বল পক্ষটি ফায়দা আদায় করে নেয় এমনটি নয়। প্রবল পক্ষটিও তার মতো করে ফায়দা আদায় করে নেয়। এ ধরনের যোগাযোগে শুধু একটি পক্ষ যদি সুবিধা পেতে থাকত, তাহলে এ ধরনের সামাজিক সম্পর্কের অস্তিত্ব থাকত না। সব লেনদেনে দুটি পক্ষ থাকে। লেনদেন অব্যাহত রাখার জন্য দুটি পক্ষেরই কম বেশি লাভবান হতে হয়।


গ্রামের মেয়েদের লিপস্টিক ব্যবহারের প্রসঙ্গ আলোচনা করতে গিয়ে আমরা গেম থিয়োরিতে প্রবেশ করে ফেলেছি। এরপর বিষয়টি খুব জটিল হয়ে উঠেছে, কাজেই আপাতত সেই জটিল আলোচনা বন্ধ থাকুক। মানুষের দিন কীভাবে গুজরান হচ্ছে, সেই আলোচনায় আসা যাক। বাংলাদেশে এখন প্রবল মূল্যস্ফীতি চলছে। এ মূল্যস্ফীতির প্রতিক্রিয়া বিচিত্রমুখী। আপাতত যা দৃশ্যমান তাতে বোঝা যায় সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি মন্দাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। প্রবৃদ্ধির হার এর ফলে হ্রাস পাবে এবং হ্রাস পাচ্ছেও। সরকারের পরিসংখ্যান সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে, তা থেকে দেখা যায় এটাকে যেভাবেই হোক টেনেটুনে ডাবল ডিজিটে কম রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে। অঙ্কের হিসাবের জারিজুরি দিয়ে মানুষের কষ্ট ঢেকে রাখা যাবে না। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষের জীবনে এখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। যদি কর্মসংস্থান থাকে, এ থেকে যে আয় রোজগার হয়, তা দিয়ে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের জীবনযাপন দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মানুষজনকে সঞ্চয় ভেঙে চলতে হচ্ছে। যাদের সঞ্চয় নেই বা যৎসামান্য সঞ্চয় আছে তারা বাধ্য হচ্ছে ঋণ নিয়ে খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে। ঋণ পাওয়াও সহজ কোনো ব্যাপার নয়। ঋণদাতা নিশ্চিত হতে চায় তার দেওয়া ঋণ গ্রহণকারী পরিশোধ করতে পারবে কিনা। অবশ্য দেশের গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হওয়ায় টাকার প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই বেঁচে থাকার প্রয়াস চালাবে। এ যেন জলরাশিতে নামার পর কোনোক্রমে নাকটি পানির ওপরে রেখে নিশ্বাস গ্রহণের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। দরিদ্ররা অনেক রকম কায়দা কৌশল করে এ নাক জাগিয়ে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।


সবজির যে দাম, ডিমের যে দাম, মাছ-মাংসের যে দাম, ভোজ্যতেলের যে দাম, তা লক্ষ করে গরিব মানুষ খাদ্য তালিকা থেকে অনেক কিছুই বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে, যা তাকে পুষ্টিমান বজায় রাখতে সাহায্য করত। পঞ্চাশ বছরের লুটতরাজ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ কিছুটা আশা জাগানিয়া পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনের একটি দিক হলো অধিকতর মানুষের শর্করা জাতীয় খাদ্য ভাতের অভাব অনেকটাই পূরণ হয়েছে। এখন মোটা চালের দাম অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ মানুষগুলো ভাতের সঙ্গে সবজি ও ডাল যোগ করে কিছুটা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারছিল। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের টালমাটাল অবস্থায় তাদের খাদ্য তালিকা থেকে অনেক কিছুই কাটছাঁট করতে হচ্ছে। যে ডালকে বলা হতো গরিব মানুষের আমিষ, সেই ডালও অধরা হয়ে পড়েছে। পুষ্টিকর খাবার না পেয়ে অনেকেই পুষ্টিহীনতা থেকে উদ্ভূত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত খরচও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ওষুধের দাম এখন গগনচুম্বী। রোগশোক হলে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের সংস্থান খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। সন্তানের পিতা-মাতারা রোগাক্রান্ত সন্তানের জন্য ওষুধ-পথ্য জোগাড় করতে না পেরে হতাশায় নিপতিত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যেরই অবনতি ঘটায়নি, মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটিয়েছে। পরিবারের অভ্যন্তরে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্কগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কত কী ঘটতে পারে, ভেবে দিশেহারা হতে হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us