দুনিয়া থেকে ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন’কে নিশ্চিহ্ন করার আয়োজন ধাপে ধাপে সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর প্রথমেই শুরু হয় মনুষ্যকেন্দ্রিক (হিউম্যানসেন্ট্রিক) বিশ্বব্যবস্থার অমানবিকীকরণ (ডিহিউম্যানইজেশন) প্রক্রিয়া। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের আখ্যা দেন ‘মানুষরূপী জানোয়ার’ (হিউম্যান অ্যানিমেল)। নেতানিয়াহু গাজার নাম দেন ‘শয়তানদের শহর’ (সিটি অব ইভিল)। সুতরাং ‘আত্মরক্ষার্থে’ এবার ‘শয়তানদের শহরে’ হামলে পড়ো, ‘মানুষরূপী জানোয়ার’দের নাশ করো— এভাবেই আগ্রাসনের নতুন এই পর্বের শুরুটা জায়েজ হয়।
এই নাশকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যেদিন (১৭ অক্টোবর) গাজার আল-আহরি আরব হাসপাতালকে বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করা হলো; তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েলে উড়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সঙ্গে নিয়ে যান মিথ্যা (ডিসইনফরমেশন) আর প্রচারণার (প্রোপাগান্ডা) ফুলঝুরি। কোনোরকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই ইসরায়েলি সুরে সুর মিলিয়ে বাইডেন নেতানইয়াহুকে বলেন, হাসপাতালে হামলা আপনাদের নয়, ফিলিস্তিনে সশস্ত্র সংগঠনের কাজ। ততক্ষণে অপরাধের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ বিনাশ করা হয়ে গেছে ইসরায়েলের।
এরপর প্রোপাগান্ডার এক অভাবনীয় নজির স্থাপন করেন বাইডেন। হামাস নাকি ইসরায়েলি শিশুদের শিরচ্ছেদ করেছে আর বাইডেন নাকি তার ছবি দেখেছে; এমন মিথ্যা বলতেও ছাড়েন না তিনি। বাইডেন অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি নারীদেরও নাকি ধর্ষণ করেছে হামাসের সদস্যরা! হামাস কর্তৃক নারী-শিশুসহ ইসরায়েলিদের হত্যা ও জিম্মি করার তথ্য ছাড়া প্রমাণিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি শিরচ্ছেদ কিংবা ধর্ষণের। তবে এসব বলার দরকার হয় বাইডেনের। সঙ্গে ‘সন্ত্রাসী’ হামাসকে তুলনা করতে হয় ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে। তারপর তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, হামাস নির্মূল প্রকল্পের অংশ হিসেবে যেকোনো পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাসকে আইএসের সঙ্গেও তুলনা করেন বাইডেন। ইসরায়েলি আত্মরক্ষার অধিকারকে চূড়ান্ত এবং একমাত্র প্রায়োরিটি হিসেবে হাজির করেন তিনি। ততক্ষণে ইসরায়েলের সমর্থনে মার্কিন রণতরী ভিড়তে শুরু করেছে। জানানো হয়েছে সেনা রিজার্ভ রাখার কথাও। আর ‘খোলা জেলখানা’ গাজা উপত্যকায় সিস্টেমেটিক আগ্রাসনের অংশ হিসেবে পানি-বিদ্যুৎ আর খাবার বন্ধের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে ধারাবাহিক বেসামরিক হত্যার সবথেকে ভয়াবহ পর্ব। নির্বিবাদে মারা শুরু হয়েছে নারী ও শিশুদের।