প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই হাতে বাজারের থলে আর খালুই উঠেছিল। ফ্রিজ কি জিনিস তা জানতাম না। তাই রোজই খাওয়ার জন্য বাজার করতে হতো। সকাল হলেই এক হাতে সেই চটের থলে, অন্য হাতে বাঁশের খালুই। এই প্রজন্ম তো এর সঙ্গে পরিচিত নয়। থলেকে ‘ব্যাগ’ হিসেবে চিনলেও ‘খালুই’ চিনবে না অনেকেই। বাঁশের বেতি তুলে জালের মতো বোনা প্রায় গোলাকার একটা পাত্র হলো খালুই, একটা হাতল বা দড়ি লাগানো থাকে মুখের কাছে। তাজা-মরা মাছ বহনের জন্য তা ব্যবহৃত হতো। এর অস্তিত্ব এখন গ্রামেও দেখা যায় না।
এখন আমরা বাজারে যাই খালি হাতে। এটা-সেটা কিনি। দোকানিরা সবই ভরে দেন পলিথিনের ব্যাগে। একেক পদের জন্য একেক সাইজের ব্যাগ। অবশেষে অনেকগুলো পলিথিনের ব্যাগ হাতের মুঠোয় ধরে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথ ধরি। বাজারের সওদাগুলো বের করেই পলিথিনগুলো ফেলে দিই এখানে-সেখানে কিংবা বর্জ্যের ঝুড়িতে। বর্জ্যের ঝুড়ি থেকে সেগুলো চলে যায় পৌর ভাগাড়ে। ভাগাড় থেকে সেগুলো স্তূপ করা হয় শহরের কাছাকাছি কোনো নিচু জমিতে। এরপর সেগুলো সেখানে পচে। আশপাশে পচনের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশকে অস্বস্তিকর করে তোলে। পাখি ও প্রাণীরা সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আশপাশ নোংরা করে তোলে। রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে, তবু সেই সব পলিথিন মাটিতে মেশে না।
আমরা কুমড়োর খোসা থেকে ভাঙা কাচ ও পলিথিন—সবই ফেলি এক পাত্রে। বিদেশে জৈব আর অজৈব, নরম ও কঠিন বর্জ্য বাড়িতেই আলাদা পাত্রে রাখার নিয়ম রয়েছে। সে জন্য দুই ধরনের বর্জ্য চলে যায় দু ধরনের বর্জ্য শোধনাগারে। সেখানে জৈব বর্জ্য যেমন বাসাবাড়ির তরকারির খোসা, হাড্ডি, ভাগাড়ের উচ্ছিষ্ট, ফলমূলের আবর্জনা ইত্যাদি চলে যায় জৈব সার তৈরির জায়গায়। আর কঠিন বর্জ্য আলাদাভাবে রিসাইক্লিং করা হয়। সবকিছুই করা হয় নির্দিষ্ট স্থানে যন্ত্রের দ্বারা, পরিবেশসম্মতভাবে। সম্প্রতি আমাদের দেশেও বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের চেষ্টা চলছে, প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে ঢাকার অদূরে আমিনবাজারের কাছে। কিন্তু সেখানে পলিথিন কি যাবে?