যেসব দেশের সঙ্গে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগিতা হয়, কখনো তাদের পেছনে ফেলে আমরা ১ নম্বরেও চলে যাই; সেসব দেশের তুলনায় এ দেশের পোশাকশ্রমিকদের বেতন-মজুরির তফাৎ দেখলে অবাকই করে।
দেশের পোশাকশিল্প বিকাশের অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়, এখানকার সস্তা শ্রম। কিন্তু সেই সস্তা শ্রম যে এতটাই সস্তা, তা বোধ হয় শিক্ষিত নাগরিক সমাজ জানেই না। সস্তা শ্রমের মতো এসব শ্রমিকের জীবন যে আরও বেশি সস্তা, সেটিও আমরা দেখি মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে গুলি চালানোর ঘটনায়।
কিছুদিন ধরে ঢাকাসহ এর আশপাশে শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ-আন্দোলন করছেন। পোশাক খাতের সর্বনিম্ন মজুরি আট হাজার টাকা। সেই টাকায় একজন শ্রমিকের পরিবার কী করে চলে?
দফায় দফায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কয়েক মাস আগে পর্যন্ত সম্বল ছিল ডিম আর আলু। সেই ডিম আর আলু কিনতেই এখন নাভিশ্বাস। কয়েক সদস্যের একটি পরিবার চালাতে কয়েক ঘণ্টা ওভারটাইম করতে বাধ্য হন তাঁরা। এতে আরও কিছু টাকা মিললেও তা দিয়ে এ দুর্দিনে কীভাবে চলা সম্ভব?
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ২৩-২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি ও নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনে আশাবাদী হয়েছিলেন পোশাকশ্রমিকেরা। কিন্তু মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তাঁরা। কারণ, ওভারটাইম করে মোট যে টাকা মাসে পান তাঁরা, সেই তুলনায়ও কম প্রস্তাবিত এ মজুরি।
স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তাবিত এ মজুরিকে মানতে পারেন না শ্রমিকেরা। দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনে নামেন তাঁরা। সেই আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে নামে পুলিশ ও মালিকপক্ষের লোকেরাও। ফলে সেখানে সংঘর্ষ-ভাঙচুর অনিবার্য। সোমবার পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় গাজীপুরে আহত এক শ্রমিক হাসপাতালে মারা গেছেন। একই দিন কোনাবাড়ী এলাকায় কারখানায় দেওয়া আগুনে মারা গেছেন আরেক শ্রমিক।