বাড়িয়েছি হাত/ দিও না ফিরিয়ে,
আর কিছু না হোক/ যেও দুদণ্ড বেড়িয়ে।
এই খুদে কবিতাটি সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার লিখেছেন সম্ভবত রমনা পার্কের হয়ে। এই আহ্বানধ্বনিতে সাড়া দিয়ে কেউ যদি একবার রমনা পার্কে আসেন—কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি রমণীয় হবেন। তিনি এ-ও নিশ্চিত জানবেন যে ওই আহ্বান কিছুমাত্র ব্যর্থ হয়নি।
বড় শহরে জনপরিসর ক্রমেই কমে আসছে। আমাদের রাজধানী ঢাকায় এ অবস্থা আরও প্রকট। শিশুকিশোর এবং বয়স্ক নাগরিকদের যে বিনোদনের প্রয়োজন, লেখাপড়া বা কর্মের ফাঁকে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা দরকার, একটু ছুটি কাটানো আবশ্যক, এসবের কোনো সুযোগ থাকছে না।
সম্প্রতি একদিন রমনা পার্কে গেলাম। আমি ঢাকা শহরের বাসিন্দা নই। তাই নিয়মিত যাওয়া হয় না। তবে যখনই ঢাকায় থাকি, সুযোগ পেলেই ভোরে মাঝে মাঝে রমনা পার্কে যাই। সেদিন গিয়ে পার্কের ভেতরে ঢুকেই শুনতে পেলাম এক জায়গায় সমবেত কণ্ঠস্বর, ‘পনেরো-ষোলো-সতরো’। আরেক জায়গায়, ‘লেফট-রাইট, লেফট-রাইট’। অন্যত্র ‘হা হা’ হাসির রোল, এ রকম কত-কী! বলা নিষ্প্রয়োজন, দলে দলে একেক জায়গায় ব্যায়াম চলছে। দল শুধু পুরুষের নয়। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার। সেই দল ছোট, বড়, মাঝারি—নানা রকমের।
গোটা পার্ক হাঁটতে হাঁটতে নজরে পড়ল বয়সী মানুষগুলো বিপুল উৎসাহে নিবেদিত হয়ে দল বেঁধে ব্যায়াম করছেন। তাঁরা একেকটি চমৎকার নাম দিয়েছেন তাঁদের দলের। উৎস, লেক ভিউ, আলফা ইয়োগা, ব্যাংকার্স চত্বর, শতায়ু অঙ্গন, মহিলা অঙ্গন ইত্যাদি। দল ছাড়াও ব্যক্তি, পরিবার ভিন্ন ভিন্নভাবে দুহাত দুলিয়ে অবিরাম হেঁটে চলেছেন। বয়সভেদেনির্বিশেষে নারী-পুরুষ সবাই। হাঁটাহাঁটি শেষে ব্যায়াম করছেন। অনেকে এসেছেন শিশুসন্তানকে হাতে ধরে। শিশু-কিশোরেরা তায়কোয়ান্দো, কুংফু শিখছে পার্কের আরেক দিকে। চমৎকার ওয়াকওয়ে করা হয়েছে হাঁটার জন্য। হাঁটা সেরে কেউ কেউ টলটলে জলের সুবিস্তৃত লেকের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন জিরিয়ে নিতে; মনকে আরও শান্ত কোমল করতে।
আমি যখন রমনায় গিয়েছি, তার কয়েক দিন আগে বেশ বাড়াবাড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আর বৃষ্টি হলে অপরূপ হয়ে ওঠে রমনা। টইটম্বুর লেক। সবুজে সবুজ বনানী। ঘাসের মাথায় সূর্যের আলো পড়ে ঝিলমিল করে ওঠে। বৃষ্টি শেষের মৃদুমন্দ হাওয়া হৃদয় মনকে উদাস করে দেয়।