সবুজ শার্ট, নীল প্যান্ট, পায়ে বুট, মাথায় হেলমেট পরা একজন মানুষ ইটের খোয়া আর ডাবের খোসার মধ্যে পড়ে আছেন। একা। কিছুক্ষণ আগেই তাঁকে ঘিরে ধরেছিল জনা পনেরো মানুষ। ভিডিওতে দেখা গেল, কিছু উন্মত্ত মানুষ তাঁকে পেটাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মারা যান মানুষটি। আর কিছুক্ষণ পরেই জানাজানি হয়, ওই পুলিশ সদস্যের নাম কনস্টেবল আমিনুল পারভেজ।
তারও ঘণ্টা দু-এক পর ইংরেজি পত্রিকা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড খবর ছাপে,‘আই জাস্ট ওয়ান্ট টু গো টু মাই ফাদার’ (আমি শুধু আমার বাবার কাছে যেতে চাই) শিরোনামে। পত্রিকাটি জানায়, ভেতরে যখন আমিনুল পারভেজের মৃতদেহ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, তাঁর সাত বছরের কন্যা তানহা তখন আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে কাঁদছে। একটিবার সে বাবার কাছে যেতে চায়। ডিউটিতে যাওয়ার আগে আমিনুল স্ত্রীকে ফোন করে তাঁর বুকের ধন কন্যাটি যেন পেটভরে দুপুরের খাবারটা খায়, সেই ইচ্ছে জানিয়েছিলেন।
মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে আমিনুলকে পেটানোর বিভিন্ন ছবি, জীবনের গল্প ভেসে আসতে থাকে। শুভবুদ্ধির মানুষের হৃদয়ে ক্ষরণ হয়। এর মধ্যেই আলোচনায় ঢুকে পড়েন নাফিসা নূর জাহান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ঘুরে বেড়ায়।
ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘মানলাম, খুব অন্যায় হয়েছে। পুলিশের ছোট মেয়ে এতিম হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে পুলিশ যখন আমার বাবাকে গুম করেছে, আমি তো ছোট ছিলাম। আমি কি দোষ করেছি। ওই ছোট মেয়েটা তো ওর বাবার লাশ পেয়েছে। আমি তো এখনো আমার বাবার লাশ পাইনি।’
নাফিসা নূর জাহানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি এখন বন্ধ। তার তাৎক্ষণিক এই মন্তব্যে অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান। কিন্তু তার কথাকে শেষ পর্যন্ত অনেকেই এড়িয়ে যেতে পারেন না।
নাফিসার মতো আরও অনেক শিশু-কিশোর ১০ বছর ধরে বাবার অপেক্ষায় আছে। কল বেলের শব্দ, কিংবা অচেনা টেলিফোনে বারবার চমকে উঠেছে। আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেও দপ করে নিভে গেছে ওদের জীবনে। বাবা ফেরেননি।
জাতিসংঘের হিসেবে গুমের সংখ্যা ৭৬—ভুক্তভোগী শিশুদের সংখ্যা কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে রাখেনি। গুম হয়ে থাকা বাবাদের সন্তানদের বাইরেও আরেকটি দল আছে, যাদের বাবা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।