১৫ অক্টোবর ঢাকায় প্রকাশিত পত্রিকার একটি সংবাদ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সংবাদটি হলো, কুমিল্লার লালমাইয়ে জুমার নামাজ পড়ার আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকানকে একটু সরে নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর অনুরোধ করার জন্য মসজিদের ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে! ঘটনাটি ঘটে লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটারা কাচারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। খুতবা পড়ানো শেষে মসজিদের ইমাম নামাজ শুরুর আগে অভ্যাসমতো সবাইকে লাইন সোজা করে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে তিনি সেখানে উপস্থিত ইউএনওকেও নামাজের লাইনে দাঁড়াতে বলেন। সবার সামনে ইউএনওকে ইমাম এভাবে বলবেন, এটা সম্ভবত ইউএনও ভাবেননি। সে কারণেই হয়তো তিনি অপমান বোধ করেছেন। অতঃপর যা হওয়ার কথা নয়, তা-ই হলো।
নামাজ শেষে তিনি ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে ডেকে নিয়ে তাঁকে তাঁরা চেনেন কি না, জিজ্ঞেস করেন। তখন মসজিদের ইমাম মো. আবুল বাশার তাঁকে চিনতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। তার পরও ইউএনও তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ডেকে এনে ইমামকে মসজিদের ইমামতি থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যান যথাবিহিত মসজিদ কমিটিতে বলে মো. আবুল বাশারকে আর নামাজ পড়াতে নিষেধ করে দেন। ইউএনওর এরূপ আচরণের ঘটনাটি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ জাতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রচারিত হয়। তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। শেষ পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিসি তাঁর অফিসে সব পক্ষকে ডেকে এনে বিষয়টি মিটমাট করে দিলে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়।
ইদানীং প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও চরিত্র স্খলনজনিত ঘটনা জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
বিশেষ করে দেশের কয়েকটি উপজেলার ইউএনও জাতীয় গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁদের অধৈর্য ও অসহনশীল আচরণ প্রশাসনিক ক্যাডারের সুনামের প্রতি সুবিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ প্রশাসনের নিম্ন পর্যায়ের এসব কর্মকর্তা (সবাই নন) কেবল বদনামই কুড়িয়ে এনেছেন। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। আজকের পত্রিকায় আমার নিজের লেখা এ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনেক ভালো ভালো কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে যতটা না প্রচার পায়, সেই তুলনায় তাঁদের সৃষ্ট যেকোনো অসদাচরণ খুব দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমার বিশ্বাস, এসব কর্মকর্তাকে প্রারম্ভিক প্রশিক্ষণে স্থানীয় বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে বিশেষ প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।