প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত সুড়ঙ্গ সড়ক জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে আজ। মাত্র এক বা দেড় দশক পেছনে তাকালেও চট্টগ্রাম শহর ও দেশের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামকে সংযুক্তকারী বঙ্গবন্ধু টানেল নামাঙ্কিত কর্ণফুলী নদীর এ সুড়ঙ্গ সড়ক সাধারণ মানুষের স্বপ্ন বা কল্পনারও বাইরে ছিল। মাত্র বছর দশেক আগে যা ছিল অলীক কল্পনা, আজ সেই টানেল একটি বাস্তবায়িত স্বপ্ন, উন্নয়নের একটি মাইলফলক স্থাপনা।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত এ ডুবো এক্সপ্রেসওয়ের অর্থনৈতিক তাৎপর্য ও গুরুত্ব বহুমুখী, কারণ এ টানেল চট্টগ্রাম শহরকে সংযুক্ত করবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কক্সবাজার, টেকনাফ ও মাতারবাড়ীর মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে। যা দেশের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ, প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বিশাল ভলিউমের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরাসরি সম্পৃক্ত। অধিকন্তু, ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ না করেই তথা চট্টগ্রাম শহরের যানজট এড়িয়ে সুড়ঙ্গ এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বা দক্ষিণ চট্টগ্রামের যেকোনো স্থানে যেতে পারবে। যা সড়কপথে দূরত্ব কমিয়ে দেবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী উন্নয়ন পদক্ষেপের কারণেই এ টানেল আজ কেবল বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীরই নয়, সারা বাংলার মানুষের একটি গর্বের নির্মাণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু টানেল একটি বৈপ্লবিক ও আমূল পরিবর্তন আনবে। যদিও পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের কারণে কক্সবাজার দেশের প্রধানতম পর্যটন আকর্ষণ হলেও এ সত্যও অনস্বীকার্য যে কক্সবাজারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের পর্যটন শিল্পের সেই বিপুল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পথকে সহজ করে দেবে। ২০২৬ সালের মধ্যে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সমাপ্ত হলে দেশের শিপিং এবং লজিস্টিকস খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের মধ্যে রফতানি ও আমদানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধু টানেল হবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম।