বিত্ত এবং অস্ত্র দুটোই বিপজ্জনক। দুটিকেই অধিকাংশ মানুষ গোপন করে রাখতে চায়। কিন্তু প্রকাশ হয়ে যায় চালচলন ও কর্মকাণ্ডে। এ ঘটনা বাংলাদেশে খুবই অদ্ভুত।প্রতিবেশী ভদ্রলোক তেমন কিছুই করেন না, থাকেন ছোট্ট একটা টিনের ঘরে। মাঝে মাঝে বাইরে বের হন। টুকটুক করে সংসার চলে। হঠাৎ দেখা গেল টিনের ঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তার স্থানে গড়ে উঠছে একটা দালান। ওই বাড়ির ছেলেমেয়েদের পোশাক-আশাকের পরিবর্তন ঘটছে। বাড়িতে বাজার আসছে রিকশা বা ভ্যান বোঝাই করে। প্রতিবেশীদের মধ্যে কৌতূহল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই বাড়ির কর্তা মোটরসাইকেল নিয়ে বের হচ্ছেন। বছর দুয়েক না ঘুরতেই একটা গ্যারেজ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ঢুকছে একটি গাড়ি। গাড়ি ঢোকার পর দেখা গেল ভদ্রলোকের সালাম বেড়ে গেল। শুধু তা-ই নয়, বাড়িতে আরও গাড়ি ঢোকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। যাঁরা এই বাড়িতে আসেন, তাঁদের চেহারায়ও বিত্তের ছাপ লক্ষ করা যায়।
বাড়ির ভদ্রমহিলা অসুস্থ হলেন। প্রথমে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায়, পরে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হলো। এখন আর প্রতিবেশীরা কৌতূহলী হয় না। এমনকি প্রশ্নও করে না। এরপর এল ভদ্রলোকের বড় মেয়ের বিয়ে। চারদিকে বিয়ের আয়োজন। গায়েহলুদের রাতে আশপাশের মানুষের ঘুম নষ্ট হওয়ার উপক্রম। গানের সঙ্গে নাচ এবং একদিন সিনেমার এক নায়িকাকেও দেখা গেল। এরপরের ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত। ভদ্রলোক সপরিবারে চলে গেলেন ঢাকায়, বাড়িতে তালা। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসেন, থাকেন এক বেলা।
এটা হচ্ছে মফস্বলের চিত্র, ঢাকার চিত্র অন্য রকম। ফ্ল্যাটবাড়িতে কেউ কারও খোঁজ নেয় না। শুধু গাড়ির সংখ্যা বাড়লে আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকেরা একটু ভ্রু কুঁচকায়। শহরে অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিত্তবান লোকের সংখ্যাও বাড়ছে। প্রায়ই খবরের কাগজে সংবাদ আসে তিন বছর আগেও যিনি চেয়েচিন্তে খেতেন, সেই লোকটি ছোট্ট একটা দোকান করলেন, নামমাত্র দোকান। দোকানটি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকত। লোকটি মোটরসাইকেল চালান, দোকানে আসার কোনো ঠিকঠিকানা নেই, সঙ্গে একটা লোক থাকে আর থাকে একটা ছোট ব্যাগ। এরপর পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনে অঢেল টাকা ব্যয় করে লোকটা এবং জয়ী হন।