একজন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার অনেক অনেক টাকা—অফুরন্ত টাকা। কিন্তু দেশের জন্য? নিশ্চয়ই ৪৭০ কোটি ডলার একটি দেশের জন্য কিছু নয়। বাংলাদেশের জন্য তো বটেই। কথা রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী ৪২ মাসে মোট সাতটি কিস্তিতে আমাদের লোন হিসেবে দেবে ৪৭০ কোটি ডলার বা ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। বলুন এটা কোনো টাকা? একটা দেশ ৬-৭ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ৬০-৭০ বিলিয়ন ডলার তার রফতানি আয়, ২০-২৫ বিলিয়ন ডলার তার রেমিট্যান্স আয়। এ রকম একটা দেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলার কি কিছু বেশি টাকা? হ্যাঁ, সাময়িক একটু অসুবিধায় আমরা পড়েছি এ কথা সত্য। কিন্তু এর জন্য কি এত কথা শুনতে হবে, এত উপদেশ, পরামর্শ, আদেশ পালন করতে হবে।
এসব প্রশ্ন করছি, কারণ দেখতে পাচ্ছি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির টাকা দেয়ার পর দ্বিতীয় কিস্তির সময় আসতেই বিশাল এক পর্যবেক্ষণ দল এসে হাজির। আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেয়ার আগে জানতে চায় আমরা ‘মহাজনের’ শর্ত পূরণ কতটুকু পেরেছি, আর কতটুকু করতে পারব। একটা শক্ত টিম নিয়ে তারা ঢাকায় আসে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ যত বিভাগ, মন্ত্রণালয় আছে তাতে তারা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) অনেক জায়গা—কোথায় তারা যায়নি। জেরা করেছে, পরিসংখ্যান চেয়েছে, অনুসন্ধান করেছে। বলাই বাহুল্য, কয়েকটা সামান্য টাকার জন্য আজ আমাদের এতসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ জিজ্ঞাসাবাদের ভালোমন্দ দিক দুইই রয়েছে। ফলে আমরা যেমন জানতে পারছি অর্থনীতির অবস্থা কী, তেমন জানতে পারছি আগামীতে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সরকার কী করতে যাচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে কণ্টকিত হয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের দিকটি। ভাগ্যিস তারা নিরাপত্তাবিষয়ক কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, যা করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে আছে অনেক বিষয়। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, রাজস্ব, ঋণখেলাপ ইত্যদি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে হয়।
বণিক বার্তার প্রতিবেদনে দেখলাম ‘আইএমএফ’ তাদের পর্যালোচনায় স্বল্পমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার পুনরুদ্ধারের জন্য আরো কঠোর মুদ্রানীতি, নিরপেক্ষ আর্থিক নীতি ও বিনিময় হারের আরো বেশি নমনীয়তা দরকার বলে উল্লেখ করেছে। অর্থনৈতিক সংস্কার, ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষাদান ইত্যাদি বিষয়ও আছে। রাজস্ব বৃদ্ধি, ভর্তুকি হ্রাস, ব্যয় দক্ষতা অর্জন, প্রবৃদ্ধি সহায়ক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যও তাগিদ দিয়েছে। বলা বাহুল্য, এসব নতুন কিছু নয়। আইএমএফ সব দেশের বিপদের সময়ই ভর্তুকি হ্রাসের কথা বলে, যার অর্থ হলো তেলের ভর্তুকি, গ্যাস-বিদ্যুৎ, সারের ওপর ভর্তুকি হ্রাস করতে হবে। অর্থাৎ এসবের দাম বাড়াতে হবে। আমাদেরও তাই করতে বলছে।