পৌরাণিক যুগ বিভাগ মতে, অনন্ত মহাকালকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন—সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি। এই চার যুগে চারজন অবতার পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে মানবজাতিকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার করেছেন এবং অমঙ্গল ও অন্যায় দমন করেছেন।
যুগাবতাবৃন্দ সব অশুভ-অকল্যাণ বিনাশ করে শুভ-সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। পৌরাণিক এই চার যুগাবতার হলেন—সত্যযুগে শ্রীহরি, ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র, দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণ এবং কলিযুগে শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। অনাচার, অন্যায় ও অসত্য বিলোপ করে সত্য, ন্যায় ও ধর্ম প্রতিষ্ঠাই যুগাবতারদের জীবনের লক্ষ্য। তাই শ্রীশ্রী গীতায় বলা হয়েছে, ‘পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম/ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।’ এই আধুনিক যুগে একই সুরে রবীন্দ্রনাথও একই কথা বলেছেন ভিন্ন ভাষায়। যেমন তিনি বলেছন, ‘ভগবান, তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে/ এই দয়াহীন সংসারে/ তারা বলে গেল, দয়া কর সবে,/ বলে গেল ভালোবাসো/ অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো।’
অবতার শ্রীকৃষ্ণের আছে ‘আটটি নামাবলি।’ এমনকি দশভুজা-তনয়া লক্ষ্মীদেবীরও আছে শতনাম। তা একালেও সনাতনী বাঙালির ঘরে ঘরে পঠিত ও গীত হয়। দশভুজারও আছে অচর্চিত, অজানা ও অল্পজানা অনেক নাম, যা ভক্তিবাদী বাঙালি হিন্দুরা অধিকাংশই জানেন না। দশভুজার অজানা সেই নামাবলি বাঙালি হিন্দুদের গৃহে চর্চিত বা গীতও হয় না। ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী আমাদের নিত্য আরাধ্য, কিন্তু সর্বশক্তির আধার জগজ্জননী দুর্গা শারদীয় বিশেষ তিথিলগ্ন ছাড়া স্মরিত ও পূজিত হন না! তাই জগন্মাতাকে নিত্য স্মরণের লক্ষ্যে সর্বাগ্রে তাঁর নামাবলি জানা প্রয়োজন। দশভুজার রূপ, গুণ ও কীর্তি অনুসারে, যাকে বলা হয় ‘দেবলীলা’।
পুরাণ মতে, তাঁর নিম্নে বর্ণিত নামাবলি জানা যায়। যেমন দুর্গা, ভগবতী, উমা, পার্বতী, পর্বতসুতা, গিরিজা, পর্বতদুহিতা, গিরিনন্দিনী, গিরিকুমারী, গিরিসুতা, গিরিবালা, শৈলজা, শৈলেয়ী, শৈলসুতা, অগসুতা, অগাত্মজা, নগনন্দিনী, হৈমবতী, বিন্ধ্যবাসিনী, অদ্রিজা, অদ্রিতনয়া, গৌরী, জগদ্গৌরী, দক্ষজা, দক্ষকন্যা, দক্ষায়ণী, হিমালয়নন্দিনী, দশভুজা, শিবপত্নী, মহেশী, মহেশানী, শিবপ্রিয়া, শিবানী, শিবা, শংকরী, জগজ্জননী, জগদম্বা, জগন্মাতা, জগদ্ধাত্রী, মহাদেবী মহামায়া, মহাবিদ্যা, মহাশক্তি, আদ্যাশক্তি, সনাতনী, আদিদেবী, অনাদ্যা, আদিভূতা, আদ্যা, অম্বা, অম্বিকা, অম্বালিকা, পরমেশ্বরী, বিশ্বেশ্বরী, সুরেশ্বরী, ঈশ্বরী, ঈশানী, ঐশানী, শুভংকরী, ভদ্রাণী, সর্বমঙ্গলা, মঙ্গলচণ্ডী, শুভদাচণ্ডী, আনন্দময়ী, মঙ্গলা, সর্বার্থসাধিকা, অন্নদা, অন্নপূর্ণা, মোক্ষদা, জয়া, বিজয়া, সর্বজয়া, জয়ন্তী, প্রকৃতি, পরমাপ্রকৃতি, সারদা, শর্বাণী, কৌশিকী, সাত্ত্বিকী, দানবদলিনী, দনুজদলনী, মহিষাসুরমর্দিনী, সিংহবাহিনী, ত্রিশূলধারিণী, ত্রিশূলিনী, শূলিনী, নিস্তারিণী, ভবতারিণী, তারিণী, ত্রিনয়নী, ত্রিনয়না, রুদ্রাণী, চণ্ডী, চামুণ্ডা, জ্বালামালিনী, ত্রিগুণা, শরণা, কাত্যায়নী, কপর্দিনী, চণ্ডবতী, শাকম্ভরী, নন্দা, কাণ্ডবারিণী, আর্যা, যোগমায়া, বভ্রবী, বাব্রবী, গৌতমী, সর্বজ্ঞা, সতী, সাবিত্রী, ভদ্রকালী, বাসন্তী, ভাস্বতী, কৈলাসবাসিনী, কামাক্ষী, রাজরাজেশ্বরী ও অপর্ণা।