১১ মার্চ, ২০১১, দিনটিতে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হয় জাপান। এদিনে জাপানের তোহোকু অঞ্চল থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত মহাসগর থেকে সৃষ্ট ভূমিকম্পের কারণে সুনামি আঘাত হানে। সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটে ফুকুশিমার দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিস্ফোরণের কারণে। যে দগদগে ক্ষত হয়তো ওপর থেকে দেখা যায় না। দুর্ঘটনার স্থান থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের বসতবাড়ি, সম্পদ হারানোর বেদনা ভোলা এত সহজ ছিল না। দুর্ঘটনার দিন থেকে পরবর্তী এক মাস পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্তব্যরত প্রকৌশলী, নিউক্লিয়ার বিশেষজ্ঞদের দুর্ঘটনা–পরবর্তী সংকট মোকাবিলা ছিল অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ১৯৫০-৬০–এর দশকে জাপানে খুব দ্রুত শিল্পোন্নয়ন ঘটে, দ্রুতগতির অর্থনীতির সামাল দিতে প্রচুর বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জাতির কাঠামোগত সেই উন্নয়নের প্রয়োজনে, এই ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। এক গ্রাম ইউরেনিয়াম থেকে উৎপাদিত শক্তি তিন টন কয়লা থেকে উৎপাদিত শক্তির সমান। সেই বিদ্যুৎ শক্তি, যা ঘিরে ভবিষ্যৎ জাপানের স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, তা পেতে পাহাড়েঘেরা বনজ প্রকৃতি ধ্বংস করে আর সমুদ্রের বুকে হাজারো সিওয়াল ডুবিয়ে তৈরি করা হয় শক্তিধর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। কিন্তু কে জানত, যে বিদ্যুৎকেন্দ্র তখনকার ভবিষ্যৎ জাপানের শক্তি ছিল, তার ৪০ বছর পরে প্রকৃতির নিষ্ঠুর প্রতিশোধের বলি হয়ে তারই ধ্বংসাবশেষের বোঝা সরাতে হবে?