রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতাটা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। এই কবিতার একটা শিক্ষা, সাধারণ মানুষ, কোনো একটা কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ, যার অভিজ্ঞতা আছে, তিনি পণ্ডিতদের তুলনায় অনেক বেশিভাবে তাঁর নিজের কাজটা জানেন আর পারেন। এ-সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার অনেক সহজ সমাধান তাঁর কাছে আছে। ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতায় সমস্যাটা ছিল—রাজার পায়ে মলিন ধুলা লাগে, সমাধান কী হবে। বিশেষজ্ঞ আর পণ্ডিতেরা মিলে প্রথমে সমাধান দিলেন, ঝাঁটা দিয়ে জগতের ধুলা দূর করা হবে। তখন ‘করিতে ধুলা দূর, জগৎ হলো ধুলায় ভরপুর।’ এরপর পানি সেচা শুরু হলো। ‘এমনি সব গাধা, ধূলারে মারি করিয়া দিল কাদা।’ এর পরের উদ্যোগ ছিল সারা পৃথিবী চামড়া দিয়ে ঢাকা। বৃদ্ধ চর্মকার সমস্যার সমাধান দিলেন, ‘নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’
ঢাকায় যানজট হঠাৎ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম পাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা এটার পূর্ব দিকে যেতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি এলাকার মানুষ উত্তরা, গুলশান, মহাখালী কিংবা মগবাজার যেতে রোজ ভয়াবহ যানজটের মুখে পড়ছেন। এটা বেশি করে ঘটছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক চালু হওয়ার পর।
মেট্রোরেলের আংশিক চালু হয়েছে। এটা উদ্বোধনের পর আমি ক্যামেরা নিয়ে উঠেছিলাম, লাইভ প্রচার করেছি। মেট্রোতে উঠে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, আমাদের দেশে এত সুন্দর একটা ব্যবস্থা দেখে আমার গর্ব হয়েছিল, সেই গৌরববোধ আমি এখনো প্রচার করে থাকি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পরের সকালেই আমি বিদেশ থেকে ঢাকা ফিরি। আমার বিমান অবতরণের সময় ছিল সকাল ৯টা ২০ মিনিট। ইমিগ্রেশন পার হয়ে, লাগেজ জোগাড় করে, গাড়ি ডেকে আমি যখন ধানমন্ডির বাসায় আসি, তখন ১০টা ৩০। এক্সপ্রেসওয়ের জাদুতে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। সেটাও আমি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করি।
একদিন রাত দুইটায় দিয়াবাড়ি থেকে মেট্রোরেলের নিচের রাস্তা দিয়ে ধানমন্ডির দিকে আসি, মাত্র কুড়ি মিনিটে আমি বাড়ি পৌঁছে যাই। বড় বড় প্রকল্প হয়েছে, সেসবের সুফল আমরা নিশ্চয়ই ভোগ করতে শুরু করেছি। কিন্তু সামান্য কিছু উদ্যোগের অভাবে, সমন্বয়ের অভাবে, জুতা আবিষ্কারের চর্মকারের মত না নেওয়ার কারণে আমাদের সুফলের বদলে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে।