খেলাপি ঋণ ও পুঁজি পাচার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় দায় কার?

বণিক বার্তা ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০৭

খেলাপি ব্যাংক ঋণ ও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার দেশের সবচেয়ে মারাত্মক সংকটে পরিণত হয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা একেবারেই অনুল্লেখ্য। সরকারের অর্থমন্ত্রীর দক্ষতার অভাব এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী মনে করি। একজন জনশক্তি রফতানিকারক হিসেবে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হলেও তিনি নিজেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পরিচয় দিয়ে থাকেন, ওই পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু একদিনের জন্যও তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলে কোনো নজির নেই। দেশের অর্থনীতির নেতৃত্বদানে এরকম একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তিকে গুরুদায়িত্ব প্রদান কতটুকু সমীচীন হয়েছে সে প্রশ্নটা ২০১৯ সালে তাকে নিয়োগ করার পর থেকেই প্রবলভাবে উত্থাপিত হয়ে চলেছে, অথচ পৌনে পাঁচ বছর ধরে তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে মেধাবী অর্থনীতিবিদ এসএএমএস কিবরিয়া এবং ২০০৯-১৮ মেয়াদে মেধাবী ও অভিজ্ঞ আমলা জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার পর ২০১৯ সালে তাকে নিয়োগের পেছনে কী কারণ রয়েছে তা জানা না গেলেও তার এহেন অযোগ্যতার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো অর্থনীতিকে। খেলাপি ঋণ ও পুঁজি পাচারকে তিনি যথাযথ গুরুত্বসহকারে মোকাবেলা করার সদিচ্ছা পোষণ করেন কিনা সে প্রশ্নটা নিয়ে এখন ওয়াকিবহাল মহল সোচ্চার। মিডিয়ায় তিনি পারতপক্ষে বক্তব্য রাখেন না, সংসদে তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। পরপর দুই বছর তিনি আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেননি। তিন বছর ধরে অর্থনীতি যে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চলেছে তার জন্য শুধু নভেল করোনাভাইরাস মহামারী কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে পার পাওয়া যাবে না। এর জন্য অর্থমন্ত্রীর যোগ্যতার ঘাটতিকেই প্রধানত দায়ী করা যায়।


দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই অর্থমন্ত্রী একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে খেলাপি ব্যাংক ঋণ সমস্যাকে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে ফেলার জন্য প্রয়াস শুরু করে দিয়েছিলেন। পদক্ষেপগুলো দেখুন:


১) ২০১২ সাল থেকে প্রচলিত তিন ধরনের শ্রেণীকরণের নিয়ম পরিবর্তন করে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক খাতের অনাদায়ী ঋণকে শ্রেণীকরণের নতুন নিয়ম চালু করেছে: এক. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের তিন মাস পর যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো সেগুলোকে ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, নতুন নিয়মে তিন মাসের পরিবর্তে সময়টা ছয় মাস করা হয়েছে; দুই. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের ছয় মাসের বেশি যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো সেগুলোকে ‘ডাউটফুল ঋণ’ বলা হতো, নতুন নিয়মে নয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ‘ডাউটফুল’ শ্রেণীকরণ হবে; এবং তিন. আগের নিয়মে নয় মাসের বেশি কোনো ঋণ খেলাপি হলে ‘মন্দঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, এখন এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য ঋণ অনাদায়ী হলে ‘মন্দঋণ’ বা ‘লস’ শ্রেণীকরণ করা হচ্ছে। ২০১২ সালের নিয়মটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিল, কিন্তু অর্থমন্ত্রীর চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরনো শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে ফিরে গেল।


২) এর পরই বাংলাদেশ ব্যাংক মন্দঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপনের নিয়মনীতি অনেকখানি শিথিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করল: আগের নিয়মে যেখানে পাঁচ বছরের খেলাপি মন্দঋণ ‘রাইট অফ’ করার যোগ্য বিবেচিত হতো সেক্ষেত্রে নতুন নিয়মে দুই বা তিন বছরের মন্দঋণও ‘রাইট অফ’ করায় কোনো বাধা থাকবে না। পাঠকদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, মন্দঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপন করার মানে হলো ওই অবলোপনকৃত মন্দঋণের হিসাবটা ব্যাংকের মূল ব্যালান্স শিট থেকে অপসারণ করে আরেকটি লেজারে হিসাবটা সংরক্ষণ করা। ‘রাইট অফ’ করার দুটো শর্ত হলো: (১) ওই ঋণ সুদাসলে আদায়ের জন্য ব্যাংক মামলা দায়ের করবে, (২) যে পরিমাণ ঋণ ‘রাইট অফ’ করা হয় তার সমপরিমাণ অর্থ ‘প্রভিশনিং’ বা ‘সঞ্চিতি’ করতেই হবে। প্রভিশনিং মানে হলো, ওই পরিমাণ অর্থ অন্য কাউকে ঋণ দেয়া যাবে না। রাইট অফ করার ফলে ব্যাংকের ক্ল্যাসিফায়েড লোনের পরিমাণ ঠিক অতটুকু কম দেখানো যাবে। অতএব নতুন নিয়ম চালু করে ক্ল্যাসিফায়েড লোন কমানোর হাতিয়ার ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেয়া হলো। আর একটা সুবিধা ঘোষিত হলো, মামলা করার বাধ্যবাধকতার জন্য আগে যে সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর) ছিল ৫০ হাজার টাকা ওটাকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us