বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, সেটা জাতীয় কি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘রাজনীতিতে বহুমতের চর্চা’ বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে সন্দেহ নেই। মানবাধিকারের অন্যতম শর্ত অনুযায়ী একটি দেশের নাগরিক কতটা স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারে, সেটা একটি জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এ কথা অনস্বীকার্য, একটি দেশ বা জাতির চরিত্র সংজ্ঞায়িত হয় সে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আলোকে। এ কথাও সত্য, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের কারণে এখনকার সময়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি করে জাতীয় রাজনীতিতে বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারেরও একটা বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অতএব শুধু রাজনীতি নয়; অর্থনীতি, সমাজ নির্মাণ বা সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রকাশেও নানা মতের সমারোহ লক্ষ্য করা যায় এবং সে জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা সংগত নয়। তবে মূল দায় অবশ্যই জাতীয় রাজনৈতিক আবহের ওপর বর্তায়।
সমকাল যখন বিষয়টি আলোচনার জন্য নির্ধারণ করেছে, তার পেছনে যে উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমি মনে করছি তা হলো, আমাদের রাজনীতিতে বহুমতের চর্চা থাকা যে অপরিহার্য, সে কথা তুলে ধরা এবং একটি সমাজে বহুমতের সহাবস্থানে যেসব সমস্যা থাকে বা উদ্ভূত হতে পারে, বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা থেকে উত্তরণ ঘটানোর উপায় খোঁজা। আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিতে বহুমতের চর্চার যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি, যা কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি, তাতে করে রাজনীতিতে এই বিষয়টি নিয়ে আমার চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার তাগিদ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি না। একই সঙ্গে মনের সব কথা ব্যক্ত করার আগে দশবার থমকেও দাঁড়াতে হচ্ছে।
আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় প্রফেসর রেহমান সোবহানের মতো ব্যক্তিত্বও এক সাক্ষাৎকারে বলেই ফেলেছেন, তিনি আগে যেসব কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিখে ফেলতেন, এখন সে কথা লেখার আগে তাঁকে কলম থামিয়ে ভাবতে হয় লিখবেন কিনা! এখানেই আলোচনায় চলে আসে সমস্যা ও সংকটের কথা। তবে সেখানে থেমে থাকা তো মানুষের ধর্ম নয়, তাই উত্তরণের পথ খোঁজা।