২০১৩ সালে ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছিল ২০টি ডেমু ট্রেন। আনার পরপরই দেখা গেল, এগুলোর পাটাতন প্ল্যাটফর্ম থেকে বেজায় উঁচু। তাতে ওঠার জন্য মই দরকার। দেশীয় পুরুষ অনেকেই যেহেতু ছোটবেলায় গেছো ছিলেন, সেহেতু অল্প দিনের মধ্যেই এটি তাদের গা-সওয়া হয়ে গেল। কিন্তু নারী-শিশু-বৃদ্ধরা তো আর গেছো নন। যা হোক, তাতেও ডেমু ট্রেনের সেবা বেশি দিন ভাগ্যে জুটল না। কিছুদিন না যেতেই গাছে চড়ার মতো ট্রেনে চড়ার যে কষ্ট, তা থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে ডেমু ট্রেনই বিকল হয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল।
এ অবস্থায় কারা কার সঙ্গে যোগসাজশ করে ডেমু ট্রেন আমদানি করেছিল, তা নিয়ে কয়েক দিন টুকটাক কানাঘুষা ও লেখালেখি হলো বটে, কিন্তু ডেমু ট্রেন আমদানির কমিশন যারা পকেটে তুলল, তাদের আর বিন্দুমাত্র বিব্রত ও জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়নি। এরই মধ্যে বিকল হয়ে যাওয়া ডেমু ট্রেনকে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামতের নামে কমিশন লুটের আরেক প্রকল্পও প্রায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রেলের কতিপয় (সংখ্যায় খুবই নগণ্য) স্থানীয় প্রকৌশলী এগুলোকে নামমাত্র খরচে মেরামত করে দিয়ে কমিশনভোগীদের বাড়া ভাতে বস্তুত অনেকটা ছাই ঢেলে দিলেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ বিষয়ে গত ১১ আগস্ট প্রথম আলো পত্রিকায় এই মর্মে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, ‘চালুর আগেই বেঁকে গেল রেললাইন’। নবনির্মিত ওই রেললাইন চালুর আগেই কেন এবং কীভাবে বেঁকে গেল, সেটি নিয়ে আলোচনা ও লেখালেখি এখনও চলমান। কারিগরি দিকগুলোর ঠিকঠাক যাচাই-বাছাই না থাকাতেই যে এমনটি ঘটেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ওই রেললাইন নির্মাণকাজ যথাযথ গুণমানে এবং কার্যাদেশে উল্লিখিত শর্তগুলো মেনে করা হয়েছিল কিনা– সে প্রশ্নও উঠছে। মূলকথা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতার ঘাটতি নজিরবিহীন।