পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা এত বেশি যে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য, তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা এবং সুপেয় পানির চিন্তা সারাক্ষণই উদ্বিগ্ন করছে নীতিনির্ধারকদের। কৃষিনির্ভর ও নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে সময়ের প্রয়োজনেই বিকাশ লাভ করছে শিল্প।
আর তৈরি পোশাকশিল্প আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত, এতে সন্দেহ নেই। এই পোশাকশিল্পের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে আরও একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যেমন ডাইং কারখানা, কম্পোজিট কারখানা, স্পিনিং মিল ইত্যাদি ইত্যাদি। পোশাকশিল্প বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই এর সঙ্গে সম্পর্কিত ও সম্পর্কের বাইরে বহু ছোট, বড় ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশের বহু মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে। একেকটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ও পশ্চাৎপদ এলাকাকে অগ্রসর করে তুলছে।
আমাদের দেশে প্রচুর পরিত্যক্ত ও শিল্প স্থাপন উপযোগী বিশেষায়িত কোনো ভূমি নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে নদীর পাড়ে, সেখানেই বসতিরও আধিক্য ঘটছে। একেকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঘিরে একে একে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তিন ফসলি কৃষিজমি, মানুষের ঘরবাড়ি—সবই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে গিয়ে ঢুকেছে।
এতে মানুষ প্রাথমিকভাবে দারুণ উপকৃত হয়েছে। কারণ তার আবাদি জমিটি সে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরেছে। উপরন্তু সে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বদৌলতে এভাবে বদলে গেছে ছোট্ট দেশটির অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদ।
বহু মানুষ শিল্প বিকাশের সুবাতাসে বাপ-দাদার পুরোনো পেশা হালচাষ ছেড়ে একজন বেতনধারী শ্রমজীবী হতে পেরেছেন। ঘরে-বাইরে কিছু পরিবর্তনও আনতে পেরেছেন। আর শিল্পের কল্যাণে বদলে যাওয়া মানুষের স্বস্তির নিশ্বাস গিয়ে পড়েছে শিল্পমালিকদের মাঝে, যা তাঁদের কল্যাণকেও বোধ করি ত্বরান্বিত করেছে।