আবুল কাসেম ফজলুল হকের জন্ম ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪০। আজ তার ৮৪তম জন্মদিন। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই লেখেন। প্রথমে কবিতা ও ছোটগল্প লিখতেন। পরে ধারাবাহিকভাবে দর্শন, নীতিবিদ্যা, সাহিত্য, ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে প্রবন্ধ ও সন্দর্ভ রচনা করেছেন। ছাত্রজীবনে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নে সক্রিয় ছিলেন। পরে একান্তভাবে লেখায় মনোযোগী হন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আছেÑ কালের যাত্রার ধ্বনি, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, সাহিত্যচিন্তা, নবযুগের প্রত্যাশায়, রাজনীতিতে ধর্ম মতাদর্শ ও সংস্কৃতি; নৈতিক চেতনা ধর্ম ও আদর্শ, যুগসংক্রান্তি ও নীতিজিজ্ঞাসা, মাও সেতুংয়ের জ্ঞানতত্ত্ব, মানুষ ও তার পরিবেশ, বাংলাদেশ কোন পথে, রাষ্ট্রচিন্তা, বাংলাদেশ, জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, বিশ্বায়ন ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদি। তার গ্রন্থগুলোর মর্মে আছে বাংলাদেশের এবং পৃথিবীর নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন। বর্তমান চিন্তাবিমুখতার মধ্যে তিনি নিরন্তর চিন্তাচর্চায় সক্রিয় আছেন উন্নত নতুন ভবিষ্যৎ সৃষ্টির আশা নিয়ে। জন্মদিন উপলক্ষে তার সঙ্গে বিশ^ পরিস্থিতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রণজিৎ সরকার
আমাদের সময় : আপনার ৮৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সেই সঙ্গে জানতে চাই, এই ৮৩ বছরের চাওয়া-পাওয়া কীভাবে মেলাবেন?
আবুল কাসেম ফজলুল হক : বাংলা ভাষার দেশে ৮৩ বছর আগে মানুষের যে জীবন ছিল, তা থেকে আজকের মানুষের জীবন বিরাটভাবে ভিন্ন। মোট জনসংখ্যার অন্তত শতকরা চল্লিশ ভাগ মানুষ সেকালে অনাহার-অর্ধাহারে অভাবনীয় কষ্টে জীবনযাপন করত। তারা এবং তাদের সন্তানরা ছিল শিক্ষাবঞ্চিত। পুরুষদের তুলনায় নারীদের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। ধনী বলা যায় এমন লোকের সংখ্যা শতকরা দুই ভাগেরও কম ছিল। বাকিদের বলা হতো মধ্যবিত্ত- নিম্নমধ্যবিত্ত, মাঝারি মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত। আর্থিক অনটনের কারণে নিম্নমধ্যবিত্তদের জীবনও খুব কষ্টের ছিল। মানুষের আয়ু কম ছিল। কবিরাজি চিকিৎসা ছিল, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও ছিল- কিন্তু কম। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা একেবারেই কম ছিল। ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তরা এর সুযোগ নিতে পারত। আট দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিবর্তনের গতিধারা বুঝতে হলে পুরো সময়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সন্ধান করতে হবে। জীবনের ওপর দুই বিশ^যুদ্ধের অভিঘাত বুঝতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সমস্যা ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়েছি। বাবা-মা ও স্কুলের শিক্ষকরা সহায়তা করেছেন। ব্রিটিশ শাসনের অবসান, পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে কাজ করেছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আমি অন্যদের থেকে এবং বই পড়ে জেনেছি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জীবন দিয়ে বুঝেছি। নানাভাবে সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর যে বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় দেখেছি, তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছয়দফা আন্দোলনের ও মুক্তিযুদ্ধের কালেই। দলীয় আত্মগঠনের কোনো চিন্তা ও চেষ্টা ওই সময়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ছিল না। দলীয় অনৈক্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক দুর্বলতা আজও কাটেনি। এখন দেখছি একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা ছাড়া দেশে আর কোনো নেতা নেই। গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা যেটুকু ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশে তা হারিয়ে গেছে। যারা বিদেশে গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ করছেন, ছেলেমেয়েদের বিদেশের নাগরিক করে দিচ্ছেন, তাদের দিয়ে তো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং জাতীয় আদর্শরূপে গণতন্ত্র গড়ে উঠছে না। আমাদের জাতি (nation) ও রাষ্ট্র (state) কি গড়ে উঠেছে? সাধনা ও সংগ্রাম কোথায়? ‘ভোগবাদ ও সুবিধাবাদ’ আমাদের কোন গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে?