প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ পাবনা চিনিকল। ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন পাবনা সুগার মিলসহ ছয়টি মিলে আখ মাড়াই বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চিনিকলের ৭৮ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। মিল বন্ধের সময় দেনা ছিল ৪০০ কোটি টাকা এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি। পাবনা চিনি কলের ১০টি আখ উৎপাদন জোনের সবগুলোর উৎপাদনই বন্ধ হয়ে গেছে। চাষিরা আখের জমিতে বাধ্য হয়ে পাটসহ অন্য ফসলের চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, চিনিকল বন্ধ হওয়ার কারণেই চিনির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ভোক্তাদের এখন এক কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১২০-১৩৫ টাকায়। চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দ্রুত সবকটি চিনিকল চালু করা জরুরি। তবে আখচাষি, চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশনের নানামুখী আবেদন ও আন্দোলনের পরও পাবনা চিনিকল চালু করেনি শিল্প মন্ত্রণালয়। যদিও চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন মাড়াই বন্ধ রাখা হলেও মিলটি আবার চালু হতে পারে।
স্থানীয় আখচাষি ও চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলসটি ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়। এটি চালু করতে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাড়াই মৌসুম চালু করে। চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পাবনার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আখ চাষ শুরু হয়। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে শুরু করে চিনিকলটি। ফলে ২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি আহরণের হার, আখের জমি, লোকসানের পরিমাণ এবং ব্যবস্থাপনার খরচ বিবেচনায় পাবনা চিনিকলসহ ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই পাবনা চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। এতে আখ নিয়ে ভোগান্তি শুরু হয় চাষিদের। এখন তারা আখ চাষই ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে মিলটি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দেনাগ্রস্ত। মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। তাদের অনেককে চলমান অন্য চিনিকলে সংযুক্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ পেশা বদলে চলে গেছেন অন্য পেশায়। মিলে বর্তমানে ১০ জন কর্মকর্তা, ১৭ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও ৩০ জন প্রহরী আছেন।