মনে করুন এখন সময় ৩০২৩ সাল। আপনি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করছেন। আপনার পাশে বসে আছে বিশাল এক জেলিফিশ। বিবর্তনের ধারায় জেলিফিশগুলো মানুষের মতো স্কুল-কলেজে যাওয়া শুরু করেছে তখন। বিজ্ঞান-কল্পকাহিনির জন্য বেশ সুন্দর একটি প্রেক্ষাপট কিন্তু এই কল্পনা। জেলিফিশগুলো বাস্তবে কেনই–বা ক্লাস করতে যাবে বলুন? ক্লাস করুক না করুক, বিজ্ঞানীরা বলছেন জেলিফিশ নাকি নানা কিছু শেখার জন্য বিশেষভাবে সক্ষম। নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ক্যারিবিয়ান বক্স জেলিফিশ কীভাবে বাধা শনাক্ত করতে হয় আর তা কীভাবে ফাঁকি দিতে হয়, তা শিখতে পারে।
দার্শনিকেরা বহুকাল ধরে অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলে যাচ্ছেন। আপনি কি অতীত থেকে শিক্ষা নেন? অধিকাংশ মানুষই হেঁয়ালি করে শেখা থেকে বিরত থাকেন। সেখানে জেলিফিশ বসে নেই। কোনো কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক ছাড়াই জেলিফিশ মানুষ, ইঁদুর ও মাছিদের মতো অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে। নতুন গবেষণা আগের সব গবেষণাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
আগের গবেষণা ছিল উন্নত শিক্ষার জন্য যেকোনো প্রাণীর একটি কেন্দ্রীভূত মস্তিষ্কের প্রয়োজন হয়। সেই মস্তিষ্ক শিক্ষা ও স্মৃতির বিবর্তনীয় মূলের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করে। ক্যারিবিয়ান বক্স জেলিফিশের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরা’। ট্রিপেডালিয়া পরিবারের সদস্য এই জেলিফিশের আকার বেশ ছোট। এর ব্যাস প্রায় ১ সেন্টিমিটার। এটি ক্যারিবীয়া সাগর ও সেন্ট্রাল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পাওয়া যায়। বক্স জেলিফিশের ২৪টি চোখ নিয়ে বেশ জটিল একটি দৃষ্টিব্যবস্থা আছে। শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) জলাভূমিতে বসবাস করা এই জেলিফিশ ঘোলা জলের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। আর শিকার ধরার জন্য পানির নিচে গাছের শিকড়ের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে দৃষ্টিশক্তি ব্যবহার করে।
বিজ্ঞানীরা ট্রিপেডালিয়া সিস্টোফোরার প্রাকৃতিক বাসস্থানের অনুরূপ পরিবেশে গবেষণা করেন। জার্মানির কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জ্যান বিলেকি বলেন, শিক্ষা বা শেখার প্রচেষ্টা হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা। জেলিফিশকে সফলভাবে নতুন কৌশল শেখানো যায়। এই প্রাণীর স্বাভাবিক আচরণকেই ব্যবহার করে শেখার সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ধূসর ও সাদা ডোরাকাটা একটি গোলাকার ট্যাংকে ম্যানগ্রোভ গাছের শিকড়ের অনুকরণে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করা হয়।