প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি

বণিক বার্তা নিজাম আশ শামস প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১১

এই তো কিছুদিন আগের ঘটনা। টানা বর্ষণে তলিয়ে গেল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। টানা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোবাইল টাওয়ারে সমস্যা হওয়ায় ফোনের নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছিল না। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া প্লাবিত হলো। বন্যায় ডুবে গেল বান্দরবান। উপদ্রুত এলাকার অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ত্রাণকার্যও যথাযথভাবে পরিচালনা করার সুযোগ ছিল না। তার চেয়েও ভয়াবহ খবর এসেছিল গণমাধ্যমে, যা মানুষের মনে ভীষণ ধাক্কা দিয়েছে। বন্যায় মারা যাওয়া লাশগুলো দাফন করার উপায় ছিল না। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই পানি! লাশ দাফন করতে মাটি প্রয়োজন। সে মাটি তখন পানির নিচে। বছরখানেক আগে এর চেয়েও ভয়াবহ বন্যার অভিজ্ঞতা হয়েছিল সিলেটবাসীর। বাংলাদেশে নিয়মিত এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। যারা বেঁচে আছেন তারা বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের ঘরবাড়ি, বসতভিটা সব ভেসে গেছে। চরম দারিদ্র্য নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে দিন গুজরান করছেন তারা। তাছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এসব রোগেও প্রাণ হারাচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। এতে মানবসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে।


২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘কি হাইলাইটস: কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যানুসারে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ভয়াবহ বন্যার সময় বাংলাদেশের জিডিপি ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। তবে এগুলো কেবল সূচনামাত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি রোধে পর্যাপ্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে, যতই দিন যাবে, বাংলাদেশ আরো ভয়াবহ সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হবে। ফলে একদিকে যেমন মোট ভূখণ্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তলিয়ে যাবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সুপেয় পানির অভাব, কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে এ দেশের ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। আর এসব সংকটের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে নারীরা। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অত্যধিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সব কিছুর পেছনে মূল কারণ হলো জলবায়ুর পরিবর্তন। এর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে বাংলাদেশকে যথাযথ পরিকল্পনা ও কৌশল অনুসারে কাজ করতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, বাংলাদেশ এমন একটি কারণে ভুগছে, এমন একটি বিষয় নিয়ে তাকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে, যেটির জন্য তার দায় খুবই সামান্য। অন্যের দায়ভার কাঁধে নিয়ে ধুঁকতে হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠার লড়াইয়ে থাকা দেশটিকে। 


বাংলাদেশের বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ দশমিক ৫ টন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ পরিমাণ ১৫ দশমিক ২ টন। বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি। সারা বিশ্বে যত কার্বন নিঃসরণ হয়, তার মাত্র দশমিক ৫৬ শতাংশের জন্য দায়ী বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে এত নগণ্য ভূমিকা রাখলেও এর বিরূপ প্রভাবের কারণে অনেক বড় ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটি। জার্মানওয়াচের গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (সিআরআই) ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। জার্মানওয়াচের তথ্যানুসারে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৮৫টি মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংঘটিত এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us