কৌতূহলবশতই ১৯ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম নতুন রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপির প্রথম জাতীয় সম্মেলনে। সাবেক মন্ত্রী এবং বিএনপির প্রথম স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত দল এটি। বিএনপি থেকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহিষ্কার হওয়ার পর রাজনীতিতে নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে কয়েকটি দল ও জোট করেছিলেন তিনি। সর্বশেষ করেন তৃণমূল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দুঃখজনক হলো নিবন্ধন পাওয়ার তিন দিনের মাথায় প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকে তাঁর মেয়ে অ্যাডভোকেট অন্তরা সেলিমা হুদা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগী ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মুবিন চৌধুরী, মহাসচিব হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আর অন্তরা সেলিমা হুদাকে করা হয়েছে দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন। এ ছাড়া ২৭ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
শমশের মুবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার আমার পূর্বপরিচিত এবং ঘনিষ্ঠজনও বটে। তা ছাড়া, তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার সঙ্গে ছিল আমার অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। ফলে এ দলটির প্রথম জাতীয় সম্মেলন প্রত্যক্ষ করার প্রবল ইচ্ছা নিয়েই সেদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সম্মেলন শেষে দেখা এবং কথা হলো শমশের ভাই ও তৈমূর ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে কি না। তৈমূর ভাইকে বললাম, বিএনপি আপনার প্রতি যে অবিচার করেছে, তার প্রতিবাদে এমন একটা কিছু করাকে আমি শতভাগ সমর্থন করি। তবে যে পথে আপনি হাঁটতে শুরু করলেন, তা বড়ই দুর্গম। একা এ পথে চলতে পারবেন না। সঙ্গী জোগাড় করতে হবে। যদি আপনারা সমমনাদের নিয়ে বড় একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারেন, তাহলে দেশের বর্তমান অস্বস্তিকর রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন। তিনি সমর্থন এবং সহযোগিতা চাইলেন।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখেছেন বহুসংখ্যক রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিচিত্র সব নামের ওই রাজনৈতিক দলগুলো নামসর্বস্ব ও অনিবন্ধিত। শুভেচ্ছা জানানো নেতারা প্রায় সবাই তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। মনে হলো, আসন্ন নির্বাচনে একটি নিবন্ধিত দলের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে মনোবাঞ্ছা পূরণের আশায় তাঁরা ব্যাকুল। তাঁরা কেউ বক্তৃতা শেষ করলেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে, কেউ বললেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’। তবে একজনও ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেননি।