ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনির পক্ষ থেকে বিচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে চিত্রনায়ক স্বামী শরিফুল রাজকে। এই নোটিশ ইস্যুর বিষয়টি চাউরের দিন সন্ধ্যায় পরীমনি ফেসবুকে একটি পোস্টও দিয়েছেন। সেখানে রাজের ব্যাপারে তাঁর কয়েকটি অভিযোগ ছিল। এসব নিয়ে এত দিন কোনো কথা বলেননি শরিফুল রাজ। আজ শুক্রবার সকালে তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। এসব ইস্যুতে যা বলেছেন, তা–ই তুলে ধরা হয়েছে।
পরীমনির পাঠানো বিচ্ছেদের প্রথম নোটিশটি পেয়েছেন?
আমি বিষয়টি শোনার পর আমার ম্যানেজারের মাধ্যমে নোটিশটি সংগ্রহ করিয়ে নিয়েছি। পড়েও দেখেছি।
বিচ্ছেদের নোটিশে যেসব কারণ তুলে ধরেছেন পরীমনি, সেসবে আপনার দ্বিমত আছে?
পরীমনি যা যা বলেছে, একদমই ঠিক। পুরোপুরি সত্য। সবকিছু আমি মেনে নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! দুই দিন ধরে আমার ফোনে অসংখ্য কল এসেছে। ঘুম থেকে উঠে একজনকে বলেছিলাম শুধু, মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি। কিছুই জানি না। তারপর দেখলাম সবাই নিউজ করেছে! আমি আসলে গেল এক–দেড় মাস সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকছি না। তাই এ ব্যাপারে খুব একটা অবগত নই।
বিচ্ছেদের বিষয়ে কী বলার আছে?
নোটিশ আমি গ্রহণ করে নিয়েছি। আইন অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যা হওয়ার হবে। উইথ ডিউ রেস্পেক্ট, এই সময়ের মধ্যে যা হবে, সেটাই আমি মেনে নেব। পরীর সিদ্ধান্তের সঙ্গে থাকতে চাই। তাঁর সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করছি। আমাদের তো আসলে অনেক দিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। আজ হোক বা কাল, সম্পর্কটা হয়তো টিকত না। বিয়ের কিছুদিন পরই আমাদের মধ্যে সমস্যা শুরু হয়। আমার মনে হয়, দুজনেরই বোঝাপড়ার বিরাট সমস্যা আছে। থ্যাংকস যে আমরা দুজনই এটা বুঝতে পেরেছি। এখন পরী যে পদক্ষেপটা নিয়েছে, সেটার সঙ্গে আমি আন্তরিকভাবে একাত্মতা পোষণ করছি। আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলছি।
আপনাদের বিচ্ছেদের প্রথম নোটিশ প্রকাশিত হওয়ার পর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে...
এটা তো আমাদের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কাজ দিয়ে সবাই আমাদের চিনলেও ব্যক্তিগত বিষয়েও যে তাঁদের একটা আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ রয়েছে, সেটা উপেক্ষা করছি না। যে কাজের জন্য আমাদের পরিচিতি বা আমাদের সবাই একটু ভালোবাসেন, তা ভাবলে এখন হয়তো আমাদের একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, এরপর হয়তো ভালো সময় আসবে। সবার প্রতি বলব, আমাকে বা আমাদের যাঁরা পছন্দ করেন, ভালোবাসেন তাঁরা যেন এটা বজায় রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনের বিষয় নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া বা বিতর্ক তৈরির কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত কোনো জায়গায় আমি আগে কখনোই যাইনি। আগামীতেও যাব না। আমি আসলে পরীর সিদ্ধান্তকে মানবিকভাবে বা যেভাবেই হোক, মেনে নিয়েছি। বাকিটা নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে যা হওয়ার, হবেই।
তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর পরীমনি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি আপনাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘আমি এমন ভয়ংকর একজন মানুষকে বারবার সুযোগ দিয়েছি।’ কী বলবেন এ বিষয়ে?
না, না—আমাকে কেউ সুযোগ দেয়নি। একটা বিষয় আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বিয়ের পর আমাকে আসলে সুযোগ দেওয়ার কিছু নেই। এমন নয় যে আমাকে সুযোগ দিয়েছে আর আমি উল্টাপাল্টা কাজ করেছি বা এমন কোনো কাজ করিনি, যেটা স্ত্রীকে ওয়াদা করেছি। একটা মানুষ বিয়ে করে কিন্তু কমিটেড হয়ে। বিয়ের পর আমি এমন কোনো কাজ করিনি, যা বিবাহকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। অথবা আমি যাঁকে ভালোবাসি বা পছন্দ করি, সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তারপরও সমস্যা হয়েছে। দিন শেষে কাগজপত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে; সেটার প্রতি পূর্ণ সম্মান আছে। পরীর প্রতি সব সময় আমার সম্মান ছিল, এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে। বিষয়টা নিয়ে এখন আর আমি জলঘোলা করতে চাই না। এই প্রথম আমি এই বিষয়ে কথা বলছি। অভিনেতা হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে বলছি—আমি কোনো কিছু বলার আগে দেখি অসংখ্য নিউজ হয়ে যাচ্ছে! আমাকে নিয়ে ভুলভাল বক্তব্য দিয়ে অনেক লেখে, অথচ আমি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। একটা টু শব্দও করিনি। তাই আমি বলতে চাই, আমাকে নিয়ে বিতর্ক করার কোনো সুযোগ নেই। আমাকে নিয়ে বিতর্ক না করে তালাকের যে নোটিশ হয়েছে, এটা সত্য। সত্যটার সঙ্গে আমাদের সবার থাকা উচিত। আমি এই সত্যের সঙ্গে আছি।
পরীমনি তাঁর পোস্টের আরেক জায়গায় আপনাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘ঘটনার সে পুনরাবৃত্তি করেছে। বারবার। সরি বলা, না খেয়ে থাকা, পা ধরে মাফ করে দাও, আর হবে না—এমনকি সুইসাইডের মতো হুমকিতেও ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে হয়েছে আমাকে।’ এ বিষয়ে কী বলবেন?
আমি এসবের কিছুই করিনি। এসব আমার নামে মিথ্যাচার। এগুলো নিয়ে আমাকে সম্পর্কে ভুলভাল কথা বলা। আমি এমন কিছুই করিনি। এটা কিন্তু পরীমনি, পরীমনির সঙ্গে বারবার এ রকম কিছু হবে! বারবার সে ক্ষমা করে দেবে! এটা পরীমনি নয়। আমি স্ট্রংলি বলছি, পরীমনির সঙ্গে এমন কিছু করিনি যে বারবার আমাকে অনুতপ্ত হতে হবে। মানুষ হিসেবে আমি কতটুকু কী করতে পেরেছি জানি না, কিন্তু আমি যে জেনুইন, এটা আমি জানি। কিন্তু তালাকের নোটিশের পর পরী যে এখন এ ধরনের মিথ্যচার করছে, এগুলো ঠিক নয়। এগুলো বাদে সে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতি শ্রদ্ধা–ভক্তি সবই আছে। যেহেতু পরীমনি আমার এক্স ওয়াইফ, আমার সন্তানের মা, তাকে নিয়ে আমি আসলে এর বাইরে কোনো কথা বলতে চাই না। সন্তানের মা বলেই তো কখনোই কোনো কিছু নিয়ে মুখ খুলিনি। আমি আসলে কখনো কিছু বলতে চাইনি বলেই, এটার সুযোগ সবাই সব সময় নিয়েছে। যেহেতু পরী আমার সন্তানের মা, ওকে সেই সম্মান দেওয়া উচিত। পরী যেভাবে এখন ভালো থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেভাবেই থাকুক।
পরীমনি এমনও বলেছেন, ‘সব ভুলে সুন্দর–স্বাভাবিক একটা পারিবারিক সম্পর্ক চেয়েছিলাম। কিন্তু সে কখনোই এই সম্পর্ককে ওউন করেনি। সবার সামনে ‘আমার বউ, আমার বাচ্চা’ করে বেড়ানো ভয়ংকর মানুষ একজন, যে কিনা সম্পর্কটাকে শুধু নিজের স্বার্থে ব্যবহারই করে গেল।’
আমরা কেউই কিন্তু শিশু নই। আমার স্বার্থটাই বা কিসের। আমি যেহেতু ভয়ংকর মানুষ, সেই ভয়ংকর মানুষকেই তো দেখছি বিয়ে করল, সংসার করে বাচ্চাও নিল! আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে ভালো কথা, কিন্তু আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার না করলে ভালো হয়। কারণ, আমারও একটা পরিবার আছে। সেখানে মা–বাবা, আত্মীস্বজন, পাড়া–প্রতিবেশী সবাই আছেন। একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমি বিয়ের পর পরী বা বাবুকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবিনি। একটা বছর আমি আমার কাজ থেকে দূরে ছিলাম। আশপাশের কারও ফোনকল ধরিনি। কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করিনি। যতটুকু পেরেছি স্ত্রী ও সন্তানের যত্ন করার চেষ্টা করেছি। আমাকে নিয়ে পরীর এ ধরনের মিথ্যাচার করার সুযোগ নেই। আমি এমন কিছু করিনি, যার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে। আমি বারবার হেনস্তা হয়েছি। এসব নিয়ে আর বলতেও চাই না। তবে এখন পরী যেটা চাচ্ছে, সেটার প্রতি শ্রদ্ধা আছে। সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। এর বাইরে অন্য অভিযোগ এলে তা আমি প্রশ্রয় দিতে চাই না।