ছোটবেলায় যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তালগাছ’ কবিতাটা পড়েছি, তখন মনে সাধ জাগতো আমিও আকাশে উঁকি মারি, কালো মেঘ ফুঁড়ে একেবারে উড়ে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হতো পাখা কোথায় পাবো? পাখা নেই বলে উড়তে পারিনি ঠিকই, কিন্তু ঘরের কোণে মায়ের বুকে মাথা রেখে স্বপ্ন দেখেছি।
আমি বা আমার মতো সৌভাগ্য নিয়ে যারা জন্মেছে, তারা মায়ের বুকে বা বাবার কোলে চড়ে দোল খাওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু অভাগা ছোট শিশু জুনায়েদ মোল্লার কপালে মায়ের আশ্রয় বা বাবার ভালোবাসা কিছুই জোটেনি। মা তাকে ছেড়ে চলে গেছেন আরও ছোটবেলায়। বারবার মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল জুনায়েদ কিন্তু মা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। বাবাও নতুন সংসার পেতেছেন।
ভালোবাসা ও আশ্রয়হীন শিশু জুনায়েদের মনে শখ ছিল একদিন সে প্লেন দেখবে। হয়তো আরও অনেক শিশুর মতোই আকাশে প্লেন উড়তে দেখে সেও আকাশে উড়তে চেয়েছিল। অভিভাবকহীন অবস্থায় গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসে সেই সুযোগ সে পেয়ে গেলো। গ্রাম থেকে আসা শিশুটি একবারও ভেবে দেখেনি ভিসা, পাসপোর্ট ছাড়া সে প্লেনে উঠবে কেমন করে? অথচ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে সেই অসাধ্যও সে সাধন করতে পেরেছিল।
শিশু জুনায়েদ মাদরাসায় যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়ে বিমানে। প্রথমে ইজিবাইকে মুকসুদপুর বাসস্ট্যান্ডে যায়। তারপর ঢাকার বাসে ওঠে চলে যায় সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বাসে বসুন্ধরা, এরপর প্লেন দেখতে বিমানবন্দর। বিমানবন্দরে উপরে উঠতে গেলে বাধা পেয়ে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে জুনায়েদ। পরে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে সোজা উঠে বসে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের রাত ৩টা ১০ মিনিটের ফ্লাইটে। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বিমানের সিটে বসে থাকার পর ধরা পড়ে যে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বিমানে উঠে বসেছে জুনায়েদ।