পথে-ঘাটে চলতে ফিরতে আবর্জনার স্তূপ পাড়ি দেওয়া আমাদের অভ্যাস। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার এই অভ্যাস লালন করে চলেছি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও আমাদের এই চর্চায় অবদান রয়েছে। অর্থাৎ রাজধানীর কথাই যদি ধরি, এখানে সিটি করপোরেশন যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে আমাদের এই ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে বসবাস ও জীবনযাপনের অভ্যাসকে ধরে রাখার পেছনে যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছে। এই যে ঢাকাবাসীর ময়লা-আবর্জনাপ্রীতি, সেখানে কিছুদিন আগে বাগড়া দিয়ে গেলেন সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ! তার আগ্রাসন থেকে রেহাই পেল না ঢাকাবাসীর প্রিয় ভাগাড় ধানমন্ডি লেকের ময়লা-আবর্জনাও।
ঢাকাবাসী, বিশেষ করে ধানমন্ডি লেকের বিভিন্ন অংশে জমে থাকে ময়লা-আবর্জনা। লেকের পাড়ে ও পানিতে ভেসে থাকে খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, কাপ ও পলিথিনের ব্যাগসহ বিভিন্ন বর্জ্য। লেকের বিভিন্ন অংশের রেস্তোরাঁয় নির্ধারিত জায়গার বাইরে পেতে রাখা হয় চেয়ার-টেবিল। ময়লা-আবর্জনা আর যত্রতত্র চেয়ার-টেবিলের কারণে থাকে না হাঁটার পরিবেশ। ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে বা বেড়াতে গেলে সাধারণত এমন সব দৃশ্যই চোখে পড়ত। আর এর মধ্যেই চলত নগরবাসীর নিত্য চলাচল।
কিন্তু এই অভ্যাসে বাদ সাধেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এত এত সরকারি ভবন, স্থাপনা বাদ দিয়ে তিনি কিনা বায়না করলেন ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে যাওয়ার। আচ্ছা সেটাও না হয় মানা গেল, কারণ তিনি নাকি ঢাকার সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসতে চান এবং এখানকার প্রতিবেশ-পরিবেশ, সমাজ সম্পর্কে ধারণা নিতে চান। সে তো ভালো কথা, তবে সেখানে তার যাওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি যদি যেতেন, তাহলে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা পেতেন। কীভাবে? তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ধানমন্ডি লেক দেখে আমাদের ময়লা-আবর্জনাপ্রীতি এবং লেক পাড়ের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে হাঁটাচলা সম্পর্কে কোনো ধারণাই পেতেন না। এর দায় কে নেবে? পোস্ট কলোনিয়ালিস্টরা যদি চাকরির ভয় না করে একে উপনিবেশিক মানসিকতার কর্মকর্তাদের পরিবেশের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেন?
মাখোঁর ঢাকা সফরে ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ পেলে হঠাৎ করেই বদলে যায় রাজধানীর এই লেকের চিত্র। লেকটির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে লেকটিকে ঘষেমেজে ঝকঝকে করা হয়। যার রেশ কাটিয়ে এখনো ধানমন্ডি লেক তার চিরাচরিত ভাগাড়ের রূপটি ফিরে পায়নি। পুরো লেক এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। অনেকটাই ঝকঝকে-তকতকে অবস্থা। লেকের ভেতর ঘাসে বা মাটিতে, কোথাও পড়ে নেই ময়লা-আবর্জনা, এমনটি গাছের ঝরা পাতাও। যেন অনেকটাই গ্রামের বাড়ির উঠান। লেকের পাড়ে ও পানিতেও নেই কোনো আবর্জনা, পানিও পরিষ্কার। লেকের বিভিন্ন জায়গা থাকা রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ। শুধু লেকটির রবীন্দ্রসরোবর অংশে থাকা কয়েকটি দোকান দেখা গেল। সেখানেও চেয়ার পাতা হয়েছে সীমিত।