প্রায় আড়াই বছর হলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে ভোক্তা পর্যায়ে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপি গ্যাস) দাম নির্ধারণ করে আসছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কখনো দেশের সব ভোক্তা তাদের নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস কিনতে পেরেছেন বলে জানা যায় না। এক বছর আগে বিষয়টি নিয়ে লিখেছিলাম। তখন যে অবস্থা ছিল এখনো ঠিক তা-ই আছে। গ্রাহক প্রতারিত হয়েই চলেছেন। এর পেছনে দাম নির্ধারণে ত্রুটি যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী ডিলার এবং ডিস্ট্রিবিউটর পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কারসাজি। অবশ্য তাঁদের সবাই যে কারসাজি করেই বেশি দাম নেন, সে কথাও বলা মুশকিল। কিছু কারণও আছে। কিন্তু এর অবসান হওয়া দরকার। অনন্তকাল ধরে দেশের কোটি কোটি গ্রাহক একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কিনে প্রতারিত হতেই থাকবেন, এটা বোধ হয় মগের মুল্লুকেও সম্ভব নয়।
দেশে এলপি গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয় দুই দশকের বেশি সময় আগে। তখন এটি কেবল পাইপলাইন গ্যাসের বিকল্প হিসেবে আবাসিক গ্রাহকদের রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন এলপি গ্যাস দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক জ্বালানি পণ্য। বর্তমানে বাণিজ্যিক, যাতায়াত-পরিবহন, এমনকি শিল্পের জ্বালানি হিসেবেও এর ব্যবহার হচ্ছে এবং ক্রমাগতভাবে এর চাহিদা বাড়ছে। সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও এর ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ফলে দৈনন্দিন জীবনে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার সম্প্রসারণের মাধ্যমে এলপি গ্যাস ইতিমধ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় উঠে এসেছে।
১৪-১৫ বছরে দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৩৩ গুণ। সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে এলপি গ্যাসের চাহিদা ছিল ৪৫ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা প্রায় ১৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। ভবিষ্যতে এর ব্যবহার বৃদ্ধি-সংক্রান্ত জাইকার একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে এলপি গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা ৩০ লাখ টন এবং ২০৪১ সালে ৬০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে।