অর্ধশতাব্দী আগে চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ওই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল অগাস্তো পিনোশে। মানুষের জন্য বাসযোগ্য সমাজ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন বামনেতা আলেন্দে, যা তাকে করতে দেওয়া হয়নি। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
সামরিক অভ্যুত্থান
৫০ বছর আগে ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিলিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। সেই অভ্যুত্থান দেশটিতে যে ক্ষত সৃষ্টি করে, তা আজও শুকায়নি। চিলির জনগণকে ন্যায়বিচার পেতে আরও পথ পাড়ি দিতে হবে। অভ্যুত্থান সম্পর্কিত তথ্য তাদের জানতে দেওয়া হয়নি। অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে নিহত অনেকের দেহ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সপ্তাহখানেক আগে চিলি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, স্বৈরশাসক জেনারেল অগাস্তো পিনোশের আমলে হারিয়ে যাওয়া ১ হাজার ১৬২ জনের দেহাবশেষ সন্ধানের নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে। ওই ঘোষণা শুনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার আশা করতে পারে, তারা তাদের স্বজনদের দেহাবশেষ বা ডিএনএর খোঁজ পাবেন। এর বেশি কিছু আশা করার নেই। চিলির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বামপন্থি প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর পিনোশে হাজার হাজার ভিন্নমতাবলম্বী, সামাজিক কর্মী ও ছাত্রদের রাজধানী সান্তিয়াগোর জাতীয় স্টেডিয়াম ও অস্থায়ী আটক কেন্দ্রে বন্দি করে রাখে। স্টেডিয়ামসহ আটক কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার বন্দিকে নির্যাতন করা হয় এবং ২ হাজার ২০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ১১ সেপ্টেম্বর আলেন্দের মরদেহ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ লা মোনেদা থেকে উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হয়, পিনোশের অনুগত সেনাদের কাছে ধরা না দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন সালভাদর আলেন্দে। মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে পিনোশেকে চিলির সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন আলেন্দে। পিনোশের নেতৃত্বে সেনারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলের ঠিক আগমুহূর্তে প্রেসিডেন্ট আলেন্দে রেডিওতে চিলির জনগণের উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দেন। ভাষণ চলাকালে নেপথ্য থেকে ভেসে আসে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ। ভাষণে আলেন্দে জানান, চিলির জনগণের প্রতি অঙ্গীকার তার চলার পথ সহজ করেনি। বিশ্বাসঘাতকরা যেন তাকে প্রোপাগান্ডা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। নিরাপদে প্রাসাদ ত্যাগের প্রস্তাব তাকে দেওয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাবেন তিনি। আলেন্দে দেশের শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘চিলি ও তার ভবিষ্যতের ওপর আমার আস্থা আছে। আপনারা মনে রাখবেন, আজ নয়তো কাল স্বাধীন মানুষ উন্নত সমাজ গড়বে। চিলি দীর্ঘজীবী হোক। শ্রমিকরা দীর্ঘজীবী হোক।’ আলেন্দের মৃত্যুর পর পিনোশে সরকারের কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে জানান, একে-৪৭সহ প্রেসিডেন্টকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ক্ষমতায় থাকাকালে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কাছ থেকে উপহার পাওয়া ওই রাইফেল হাতে বেশ কয়েকবার ছবি তুলেছিলেন আলেন্দে।