১৯৮১ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ ছিল চরম দরিদ্র। এর পর অনেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। বেশ কিছু মানুষ চরম দরিদ্র থেকে দরিদ্র বা দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্তে পরিণত হয়। সেই সময় মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রন ইংগলহার্ট পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করলেন, অভাব গেলে সত্যি সত্যি মানুষের স্বভাব বদলায় কিনা।
তিনি ধরে নিলেন, অভাব গেলে হয়তো মানুষ শিক্ষার প্রতি বেশি নজর দেবে। তারা হয়তো তখন ধর্মীয় বই কিংবা রাজ-রাজড়াদের কথা অন্ধভাবে অনুসরণ না করে নিজেদের বোধ-বুদ্ধি বা অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব দেবে। তাতে পুরো পৃথিবীর মানুষের মূল্যবোধ প্রায় এক রকম হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দেবে।
৪০ বছর পর দেখা গেল, চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমতে কমতে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন মধ্যবিত্তের কাতারে। এ প্রেক্ষাপটেই ইঙ্গলহার্ট তাঁর ওয়ার্ল্ড ভ্যালুজ সার্ভে পরিচালনা করেন। সার্ভে হয় প্রতি পাঁচ বছরে একবার। শেষ বার হয়েছে ২০১৭-২০২২ সময়কালে; ৯০টি দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের ওপর। দারিদ্র্য কমলে সব মানুষের মূল্যবোধ যে কাছাকাছি পর্যায়ে চলে আসবে বলে মনে করা হয়েছিল, সেটার আংশিক সত্যতা পাওয়া গেল। একই সঙ্গে দেখা গেল, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে চিন্তার ভিন্নতা বেড়েই চলেছে।
ইঙ্গলহার্টের মতে, নিরাপত্তা কিংবা নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষ ভিন্নভাবে চিন্তা করে বা তাদের মধ্যে ভিন্ন মূল্যবোধ তৈরি হয়। একটি অনিরাপদ জগতে যেখানে হঠাৎ কোনো একদিন কোলের শিশু কিংবা মাঠের পাকা ধান নিমেষে নাই হয়ে যায়, সেখানে মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয় হচ্ছে তার পরিবার এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জায়গা হচ্ছে মসজিদ, মন্দির ও গির্জা। যদি এই নিরাপত্তাহীনতা কেটে যায়, তখন মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয় ও নির্ভরযোগ্য জায়গা হয়ে ওঠে সে নিজে।