কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, ক্ষমতার পুরোনো বলয়গুলো ক্রমে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে নতুন কিছু দেশ ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এ রকমই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকা একটি দেশ ভারত সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘ভারতীয়রা এখন যে পররাষ্ট্রনীতির চর্চা করছে, তা খুবই চমৎকার, কারণ সেখানে একটা ভারসাম্য আছে।’ অথচ এই কিসিঞ্জারই ১৯৭১ সালে ভারতের প্রতি চরম বিমুখ ছিলেন। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দেখা করতে যান, তখন কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ভারতীয়রা খুবই আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন।
এখন কী এমন হলো যে সেই কিসিঞ্জারই ভারত সম্পর্কে উল্টো গীত গাইছেন? কারণ, ভারত আর সেই ভারত নেই। তার মানবসম্পদ ও অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে। চীনকে বাগে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। এই সুযোগে ভারতও তার পুরোনো সোভিয়েত বলয় থেকে সরে এসে পশ্চিম থেকে যত রকম সুযোগ-সুবিধা নেওয়া যায়, সেসব নেওয়ার চেষ্টা করছে।
জওহারলাল নেহরু যে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিলেন, সেটা থেকে ভারত এখনো খুব একটা দূরে সরে যায়নি এবং এই মনোভাব যত দিন অবশিষ্ট থাকবে, পশ্চিমারা ভারতকে খুব আপন ভাবতে পারবে না। যদিও চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত হলে সে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায়, পশ্চিমের সঙ্গে তার সম্পর্কটা এখনো মূলত অর্থনৈতিক, স্ট্র্যাটেজিক নয়। কারণ, সে রাশিয়াকে ছাড়তে রাজি নয়। সে ইউক্রেন আক্রমণকে নিন্দা জানায়নি। রাশিয়া থেকে একদিকে সে যেমন অস্ত্র কেনে, অন্যদিকে তেল কিনে সে প্রচুর লাভও করে। হয়তো এসব কারণেই এ বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তার প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।