দেড় দশকে বাংলাদেশের অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় উন্নয়ন হয়েছে। বয়স যাদের পঁচিশের ঘরে, তাদের কাছে অবশ্য এসবই স্বাভাবিক। কারণ তারা আগের বাংলাদেশ দেখেনি। তাদের কাছে, সরকার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু আমরা যারা আরেকটু পুরোনো, দেড় দশকের আগের দেড় দশকে বর্তমান বাংলাদেশ আমরা কল্পনাও করিনি, দাবিও করিনি।
যেমন, ঢাকায় মেট্রোরেল করতে হবে, এই দাবি করার মতো কল্পনাশক্তিও আমাদের ছিল না। দেড় দশকে এমন কল্পনা ছাড়ানো উন্নয়ন একটা নয়, অসংখ্য হয়েছে। উন্নয়ন এখন আমাদের কাছে ডালভাত।
বাংলাদেশ যখন সাবমেরিন কিনলো, আমরা বললাম সাবমেরিনের যুগে বাংলাদেশ। তারপর স্যাটেলাইট যুগ, মেট্রোরেল যুগ, এক্সপ্রেসওয়ে যুগ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুগ, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যুগ—বাংলাদেশ নিয়মিতই নিত্যনতুন ধাপে পা রাখছে।
আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে হারিকেন আর কুপির আলোয়। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন আমাদের গ্রামে প্রথম বিদ্যুৎ আসে। তাও একটা দুইটা বাল্বের টিমটিমে আলো। এখনকার মতো আলো ঝলমলে নয়। আমাদের ছেলেবেলায় রান্না হতো মাটির চুলায়, বড় জোর কেরোসিনের স্টোভে। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, ঘরে ঘরে গ্যাস।
এখন আধঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা, আমাদের ছেলেবেলার বিদ্যুৎহীন সময়ের চেয়েও অসহনীয়। আমাদের মামা বাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে, সালিয়াকান্দি রঘুনাথপুরে। আমার জন্ম সেখানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সেইখানে ছিলাম। দুর্গম সেই এলাকায় যাওয়ার দুইটাই উপায়-বর্ষায় নৌকা, গ্রীষ্মে হাঁটা। এখন গাড়ি নিয়ে মামাবাড়ির উঠানে নামা যায়।