সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দাবি করেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত ভালো। যাঁরা অর্থনীতিতে সমস্যার কথা বলেন, তাঁরা অর্থনীতি জানেন না। এ রকম ‘গলাবাজি’ করে কি তিনি অর্থনীতির সাম্প্রতিক সংকটকে উড়িয়ে দিতে চাইছেন? কিন্তু অনস্বীকার্য সত্য হলো, দেড় বছর ধরে অর্থনীতি বহু ধরনের সংকটে নিমজ্জমান। সংকটগুলোর প্রায় প্রতিটিই গুরুতর।
- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিপজ্জনক পতনের ধারা,
- টাকার হিসাবে ডলারের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি,
- প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠাতে গেড়ে বসা হুন্ডি ব্যবসার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা কিংবা পতন,
- মারাত্মক ডলার সংকটের কারণে আমদানির এলসি খুলতে অপারগতা,
- কার্ব মার্কেটে হু হু করে ডলারের দাম বেড়ে ২০২১ সালের ৮৭ থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১২০ টাকায় উল্লম্ফন ও বাংলাদেশি টাকার বৈদেশিক মানের প্রায় ২৭ শতাংশ অবচয়ন,
- আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং ও রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে দেশ থেকে বিদেশে ব্যাপক পুঁজি পাচার,
- হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশ থেকে বিদেশে ক্রমবর্ধমান ব্যাংকঋণ পাচার,
- খেলাপি ব্যাংকঋণ সমস্যার বিপজ্জনক অবনতি,
- রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না এনে সেগুলো দিয়ে বিদেশে ঘরবাড়ি-ব্যবসাপাতি কেনা,
- অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বেলাগাম মূল্যস্ফীতির প্রকোপ,
- দুর্নীতি ও পুঁজি লুণ্ঠন সম্পর্কে সরকারের অব্যাহত নিষ্ক্রিয়তা,
- দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে চার বছর ধরে ধারাবাহিক ঘাটতি পরিস্থিতি,
- ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে বহুদিন পর সৃষ্ট বিপজ্জনক ঘাটতি পরিস্থিতি,
- ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া,
- ২০২৩ সালে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ—এই সমস্যাগুলোর প্রতিটিই যেকোনো দেশের অর্থমন্ত্রীর ঘুম হারাম করার জন্য বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা।
কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রীর কাছে এই সব সমস্যা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে ‘কুসুমাস্তীর্ণ’ মনে হচ্ছে! কারণ, দুঃখজনক হলেও সত্য যে দেশের ইতিহাসে এমন অর্থমন্ত্রী অতীতে কখনোই আমরা পাইনি। এমন ধারণা করার কারণ রয়েছে যে তাঁকে অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে রেখে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব হয়তো অন্য কারও সহায়তায় এবং উচ্চতর পদের আমলাদের পরামর্শে অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের দায়িত্বটি পালন করতেই বেশি পছন্দ করছেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বেশ কিছুদিন আগেই ‘অ্যাবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি দুই বছর ধরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সভায় অংশ নেননি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৪ সেপ্টেম্বরের পত্রপত্রিকায় দেখলাম জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে ‘বোবা অর্থমন্ত্রী’ বলে গালমন্দ করলেন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই, কিন্তু এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না!