রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়া দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত, ভালো বার্তাও নয়। এ ধারা যদি চলতেই থাকে এবং ক্রমেই নিম্নগামী হয়, তা হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি ও ডলার সংকট কাটানো দুরূহ হবে। সঙ্গত কারণে দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখা দেবে। এ অবস্থায় যে কোনো মূল্যে রেমিট্যান্সের প্রবাহ যেন স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত থাকে, এর ব্যবস্থা করা জরুরি। যখন প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে এবং সেটি দৃশ্যমান, তখন রেমিট্যান্স কমে যাওয়া কোনো যৌক্তিক কথা নয়। প্রকৃত চিত্র হলো, রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যায়নি। রেমিট্যান্স আগে যেভাবে পাঠানো হতো, এখন সেভাবে পাঠানো হচ্ছে না। সমস্যা যেহেতু চিহ্নিত করা গেছে, সেহেতু কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কোনো ধরনের গড়িমসি করা হলে এর খেসারত দিতে হবে সবাইকে।
আমরা সবাই জানি, এ দেশের অর্থনীতির ভিত্তি যে কয়টা খাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এর অন্যতম হলো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। এ কারণে যারা রেমিট্যান্স পাঠান, তাদের বলা হয় ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’। এ যোদ্ধাদের কারণেই কোভিড ১৯-এর অতিমারীর সময়ও আমাদের অর্থনীতিতে বড় রকমের কোনো সংকট দেখা দেয়নি। ওই সময় সবার আশঙ্কা ছিল, অর্থনীতিতে বড় রকমের কোনো বিপর্যয় দেখা দেবে। সময়টা ছিল ওই রকমই। বিশ^জুড়ে সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানুষ কার্যত হয়ে পড়েছিল গৃহবন্দি। যারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সেদিন মরণপণ করেছিলেন, তারা প্রকৃত অর্থেই নিয়েছিলেন জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি। তাদের মধ্যে ছিলেন আমাদের প্রবাসী স্বজন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। করোনার মধ্যেও তারা রেমিট্যান্সের প্রবাহ অব্যাহত ও স্বাভাবিক রেখেছিলেন। এ কারণেই আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল করোনার ধাক্কা সামলে নেওয়ার। বাস্তবে হয়েছিলও সেটিই। কিন্তু এই সময়ে এসে রেমিট্যান্সের স্বাভাবিক প্রবণতায় বড় রকমের ফারাক তৈরি হওয়া সবার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।