আমরা বসবাস করছি এমন সময়ে যখন ভোগবাদী মূল্যবোধ প্রকট হয়ে উঠেছে। সামাজিক পরিস্থিতি দেখে হতাশার সঙ্গেই অনুধাবন করতে হয়, জ্ঞানচর্চার চেয়ে ক্ষমতাচর্চার প্রতি আকর্ষণ এখন বেশি। বইয়ের পরিবর্তে ভোগ্যপণ্য কিনতেই বেশির ভাগ মানুষ এখন শুধু উন্মুখই নয়, বরং মরিয়া। সংবাদমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমে ভোগবাদী জীবনযাত্রার অতি আকর্ষণীয় উপস্থাপন মানুষকে মোহগ্রস্ত করে তুলবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন পরিবেশ কি ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব বোঝার জন্য সহায়ক? আমরা তো দেখছি সমাজে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ের চেয়ে ব্যবসায় প্রশাসন আর প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়েরই কদর বেশি।
অনেক বছর ধরেই দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খুব কমই জানে। অন্য পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার সময়ও দেখেছি পরিস্থিতি তথৈবচ।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় সংক্রান্ত কোর্স বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দেখেছি, সেই কোর্সের অনেক ছাত্রছাত্রী জীবনে প্রথমবারের মতো শোনে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার নাম, মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বই আর চলচ্চিত্রের কথা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নানা দিক। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই তারা জেনেছে দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেল, খেলোয়াড় কিংবা কোনো ইউটিউবার ও মোটিভেশনাল বক্তার নাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা গুরুত্বপূর্ণ বই নিজেদের স্কুল-কলেজ জীবনে অনেকেরই পড়া হয়নি।