দেশের কারাগারসমূহ প্রকৃতই সংশোধনাগারে রূপান্তরের স্বার্থে যখন তথায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের তাগিদ নানা মহলে অনুভূত হইতেছে, তখনই জানা গেল চট্টগ্রাম কারাগারের লাগেজ স্ক্যানারটি নিষ্ক্রিয় থাকায় হস্ত সহযোগে বন্দিদের তল্লাশিকার্য সম্পন্ন হইতেছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, ইহার ফলস্বরূপ কারাগারটিতে মাদক ও অন্যান্য নিষিদ্ধ দ্রব্যের অনুপ্রবেশ রুদ্ধ করা কঠিন হইয়া পড়িয়াছে।
বুধবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী হত্যার আসামি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মাদকের আসামিসহ অনেকেই উক্ত কারাগারে প্রবেশকালে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সঙ্গে রাখে। কিন্তু অনেক কারারক্ষী সংগত কারণেই এই সকল অপরাধীকে হস্ত সহযোগে তল্লাশি করিতে ভয় পান। তাই জেলবন্দিদের জিনিসপত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য ২০১৭ সালে কোটি টাকা মূল্যের একটি লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। কিন্তু চার বৎসর অতিক্রান্ত হইল উহা নিষ্ক্রিয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে নামকাওয়াস্তে আসামিদের শরীর, ব্যাগ ও দ্রব্যাদি তল্লাশির পর কারাগারে প্রবেশ করাচ্ছেন কারারক্ষীরা। প্রতিবেদনে উদ্ধৃত একজন কারা কর্মকর্তার মতে, এই প্রক্রিয়াতেই কোনো কোনো বন্দির নিকট মাদক ও অবৈধ দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। সুতরাং চট্টগ্রাম কারাগারের নিরাপত্তা কতটুকু ভঙ্গুর, উহা অনুমান করিতে কোনো বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই।
প্রতিবেদনমতে, চট্টগ্রাম কারাগারে ২ হাজার ২০০ বন্দির ধারণক্ষমতা থাকিলেও বর্তমানে সাড়ে পাঁচ সহস্রাধিক কয়েদি ও হাজতি বন্দি রয়েছে। ইহার মধ্যে শতাধিক জঙ্গি ও শতাধিক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। যথাযথ নজরদারির অনুপস্থিতিতে তথায় অপরাধ সংঘটন সহজসাধ্য হওয়াই স্বাভাবিক। উপরন্তু এহেন অসুস্থ পরিবেশে অপরাধীদিগের সংশোধন দূর স্থান, বরং ছোট অপরাধী দুর্ধর্ষ অপরাধীতে রূপান্তরিত হওয়া বিচিত্র কিছু নহে। বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জস্বরূপ।