জোহানেসবার্গে ব্রিকসের যে সম্মেলন হয়ে গেল, তাতে বাঙালির চিরাচরিত সাজপোশাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। তিনি এর বিভিন্ন কার্যক্রমে জোরালোভাবেই অংশ নিয়েছেন। সেখানে চীনা নেতা শি জিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর যে বৈঠক হয়েছে, তাও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপের প্রশ্নে চীন তার বিরোধিতার কথা আবারও স্পষ্ট করেছে। ভারতের নেতা নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর দেখা হয়েছে; যদিও আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন সম্মেলনে অংশ না নিলেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এতে অংশ নিয়েছেন। পুতিন অংশ নিলে তাঁর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখাসাক্ষাৎ হতো। কিছু মতবিনিময়ও হতো। তবে দেখা না হলেও বাংলাদেশ নিয়ে রাশিয়ার মনোভাব স্পষ্ট। তারা এর মধ্যে একাধিকবার বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করবে না। অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপের চেষ্টারও তারা নিন্দা করে।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়ে ভারতও তার মনোভাব গোপন করেনি। ভারত চায়, নির্বাচনটি পরিকল্পনামাফিক শান্তিপূর্ণভাবে হোক এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা বহাল থাকুক। ভারত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে স্বভাবতই চিন্তিত। এতে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তারা স্বভাবতই এদেশে এমন শক্তির উত্থান চায় না, যারা ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা জানি, কাদের শাসনামলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে এসে নিজ দেশের মাটিকে প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক।
আজকের দুনিয়ায় কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র এ ধরনের শত্রুতার যোগ দিতে পারে না। ভারতের সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। দেশটির সঙ্গে আমাদের ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক। অনেক পণ্যসামগ্রী আমরা ভারত থেকে সহজে আমদানি করি। সেখান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করেও নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছি। এ নিয়ে বিরুদ্ধবাদীরা অবশ্য অনেক কথাই বলে থাকে। তারা কথায় কথায় ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত বা কোনো দেশের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া হবে, এটা চিন্তাই করা যায় না।