প্রাণ-প্রকৃতি, জনস্বাস্থ্য-জনজীবন ও জীবিকার বিপরীতে মুনাফা-অন্ধ তৎপরতায় বিশ্বের বাস্তুসংস্থান, নদী-সমুদ্র-জলবায়ু আক্রান্ত। তথাকথিত উন্নয়নের এই প্রাণবিনাশী মুনাফালোভী চরিত্রের কারণে বিশ্ব আজ অতিমারিসহ নানা বিপর্যয়ের শিকার। জলবায়ু পরিবর্তন, নানা অসুখ-বিসুখ এবং ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক বিপর্যয় পুরো বিশ্বকে অস্থির করে ফেলেছে। এই ধারায় বিশ্ব চলতে থাকলে সামনে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় আসবে, বাংলাদেশের জন্য বিপদ হবে আরও বেশি।
এই বিপদের বড় উৎস জীবাশ্ম জ্বালানি ও বিদ্যুৎ। একটা দেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত যদি একটা সক্ষম ও টেকসই ভিত্তি নিয়ে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে কার্যকর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—সবকিছুই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যেমন আফ্রিকাতে, যাদের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, কিন্তু শুধু তার জ্বালানি সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় সক্ষমতার অভাবে এবং দেশি-বিদেশি শাসকদের লুটেরা ভূমিকার কারণে সেই দেশগুলো শুধু যে উচ্চ দারিদ্র্যে আটকে আছে তা-ই নয়, তারা ভয়ংকর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অস্থিরতা, সহিংসতার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। এসব দেশকে বলা হয় রিসোর্স কার্সড কান্ট্রি বা সম্পদের জন্য অভিশপ্ত দেশ। বাংলাদেশকেও সেদিকে নেওয়ার চেষ্টা আমরা বহু বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি। জনগণের প্রতিরোধের কারণে তাদের সব চেষ্টা, সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। ফুলবাড়ী প্রতিরোধ তার মধ্যে একটি।
এই বছরের ২৬ আগস্ট ঐতিহাসিক ফুলবাড়ী গণ-অভ্যুত্থানের ১৭ বছর হলো। প্রতিরোধের এই বার্ষিকীতে আমরা আবারও সালাম জানাই এই দিনে শহীদ তরিকুল, সালেকিন, আল আমিন; বীর যোদ্ধা বাবলু রায়, প্রদীপ, শ্রীমন বাস্কেসহ অগণিত সংগ্রামী মানুষকে, যাঁদেরসহ লাখ লাখ মানুষের প্রতিরোধে শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, পুরো বাংলাদেশ একটি মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে।