বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে নদী-নালা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ নদী। যাতায়াত, মালামাল পরিবহন, মৎস্য আহরণ, কৃষিতে সেচ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু দিনে দিনে দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যে নদীগুলো প্রাণ হারাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে জীবনযাপনে, জনস্বাস্থ্যে। নদী ভরাট হওয়ায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এতে বর্ষা মৌসুমে বন্যা দেখা দিচ্ছে। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশ পেতে চাইলে নদীগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং এর অবাধ জলপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ আমলের সিএস ম্যাপ ধরে সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। দেরিতে হলেও সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। পাঁচ শতাধিক নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে যে ৫০০ কোটি টাকা একনেকে বরাদ্দ হয়েছে। এ বরাদ্দ যেন কাজে আসে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও বর্তমানে চিত্রটা ভিন্ন। দূষণের পাশাপাশি দখলদারদের দখলতাণ্ডবে আমাদের নদীগুলো বেহাল। আজকে আর নদীর সেই যৌবন নেই, নাব্যতা নেই, প্রায় সব নদীই আজ দূষিত। অথচ বাংলার ইতিহাস রচনা করেছে ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী। এ নদ-নদীই বাংলার প্রাণ, এ ভূখণ্ডকে গড়েছে, এ দেশের আকৃতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করেছে। প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট কারণে এ নদ-নদীই আবার কখনো কখনো অভিশাপ হিসেবে হাজির হয়েছে। নদীর জলধারা পরিবর্তনে কত সুরম্য নগর, কত বাজার-বন্দর, কত বৃক্ষশ্যামল গ্রাম, শস্যশ্যামল প্রান্তর, কত মঠ ও মন্দির, মানুষের কত কীর্তি ধ্বংস হয়েছে, আবার নতুন করে সৃষ্টি করেছে তার ইয়ত্তা নেই।