তুরস্কের বিপ্লবী কবি নাজিম হিকমত জেলখানার চিঠিতে লিখেছিলেন,
‘জেলে এলাম সেই কবে
তারপর গুনে গুনে দশবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী।
পৃথিবীকে যদি বলো, বলবে—
‘কিছুই নয়,
অণুমাত্র কাল।’
আমি বলব—
‘না, আমার জীবনের দশটা বছর।’
খাদিজাতুল কুবরা নামের মেয়েটি জেলে যাওয়ার পর পৃথিবী মাত্র একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে। অর্থাৎ তাঁর কারাবাসের সময় এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ৩৬৫ দিন। ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট তিনি গ্রেপ্তার হন। তাঁর জীবন থেকে একটি বছর ঝরে গেছে।
খাদিজা কোনো দুর্ধর্ষ অপরাধী নন। ছাত্রজীবনে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ কোনো তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন—এ রকম প্রমাণও সরকারের কাছে নেই। তারপরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাঁকে এক বছর ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। বারবার তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়ে যায়।
খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন। তাঁর একটি অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন। সেটাই খাদিজার জন্য কাল হলো। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ।
এজাহারে বলা হয়, বাদী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
খাদিজা যে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন, সেই অনুষ্ঠানে যদি অবসরপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন, এর দায় খাদিজার ওপর চাপানো হবে কেন? টেলিভিশনের টক শোতেও তো দেখা যায়, একজন অতিথি অপরের চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেন, নানা রকম বিদ্বেষ ছড়ান। সে কারণে সঞ্চালক কিংবা অতিথির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানা নেই।