আমাজন উজাড় নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না লাতিনের নেতারা। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। কোকেন উৎপাদন, পাচারসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হুমকিতে ফেলেছে আমাজনের জীববৈচিত্র্য ও এর বাসিন্দাদের। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
লাতিন নেতাদের উদ্যোগ
আমাজন। বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন। অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল এটি। প্রায় ২৫ শতাংশ বায়ুম-লীয় কার্বন ডাই-অক্সাইড আমাজন শোষণ করে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৬ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে। এ কারণে আমাজনের অপর নাম পৃথিবীর ফুসফুস। তো এই ফুসফুসকে নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল উদ্বিগ্ন, কারণ সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের আধার আমাজনে দেদার চলছে বৃক্ষনিধন, যা প্রাণ-প্রকৃতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক জলবায়ু এজেন্ডা বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বৃক্ষনিধন ছাড়াও আমাজন রেইনফরেস্টকে ঘিরে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার আরেকটি কারণ আছে। বনটির ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে সংঘবদ্ধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অপরাধীরা সেখানে কোকেন উৎপাদন, পাচার ও সেবন করছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। বন উজাড় ঠেকাতে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে চলতি মাসের ৮ ও ৯ তারিখে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেলেমে এক সম্মেলনের আয়োজন করে দেশটির সরকার। ব্রাজিল ছাড়াও লাতিন আমেরিকার আরও আটটি দেশ আমাজন ভাগাভাগি করছে। দেশগুলো হলো পেরু, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা, ফ্রেঞ্চ গিয়ানা, সুরিনাম ও গায়ানা। এই আট দেশের নেতা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষনিধন বন্ধ করা, বনের যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো উদ্ধার করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ ও আমাজনের তিন কোটি অধিবাসীকে সহায়তা করা। আঞ্চলিক নেতারা ছাড়াও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরামর্শদাতারা। সম্মেলন চলাকালে লাতিন আমেরিকার নেতারা আমাজন রক্ষায় একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে লাতিন নেতারা এবার পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার ওপর জোর দেবেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা ও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো উভয়ই আশা করেন, এর মাধ্যমে লাতিন অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গত শতকের সত্তরের দশকে গঠিত সংস্থা আমাজন কো-অপারেশন ট্রিটি অর্গানাইজেশনকে রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে বিকশিত করতে সমর্থন আদায় করা যাবে। সম্মেলন শুরুর আগে ঘোষণাপত্রটির খসড়া প্রস্তুতিমূলক বৈঠকগুলোতে উপস্থাপন করা হয়। ওই খসড়ায় বিভিন্ন দেশের সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের প্রতি পূর্বের লক্ষ্য অর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেসব লক্ষ্যের মধ্যে আমাজনে বসবাসরত আদিবাসীদের সুরক্ষা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কর্মকাণ্ড বাড়ানো ও টেকসই সবুজ জৈব অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য।