জন্মের পর প্রথম ছয় মাস মায়ের দুধই শিশুর একমাত্র খাবার। এরপর অন্যান্য খাবার গ্রহণ শুরু করলেও দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের নানা পুষ্টি উপাদান তার প্রয়োজন হয়। আর শিশুর এই পুষ্টি নিশ্চিত করতে মায়ের নিজের খাবারদাবার হতে হবে ঠিকঠাক। এই সময় মায়ের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা পরিবারের কর্তব্য।
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই ওজন বাড়ে। সন্তানের জন্মের পর বেশি পরিমাণে খাওয়াদাওয়া করলে ওজন আরও বাড়বে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকেন অনেক নতুন মা। তবে বাস্তবতা হলো, সন্তানকে দুধ খাওয়াতে গিয়ে যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয়, তাতেই মায়ের ওজন কমতে থাকে। এদিকে আবার সন্তান পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না বলে মনে হলে মা কী করবেন না করবেন, তা নিয়েও নানাজন নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যার সবটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। একজন স্তন্যদাত্রী মায়ের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত? সন্তানের পুষ্টি এবং মায়ের সুস্থতা—এই দুটি দিক বিবেচনায় রেখে তৈরি করতে হবে খাদ্যতালিকা। সত্যিকার অর্থেই এই সময় মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। তাই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন মা। স্তন্যদাত্রী মায়ের খাবারদাবার প্রসঙ্গে এমন নানা পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
ক্যালরির হিসাব-নিকাশ
খুব হিসাব করে, মেপে মেপে খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতি ১০০ মিলিলিটার দুধ তৈরির জন্য একজন মায়ের খরচ হয় ৬৫ ক্যালরি। দুগ্ধগ্রন্থি থেকে নিঃসরণে আরও ক্যালরি খরচ হয়। সব মিলিয়ে এ জন্য দেহের চর্বি যেমন ভাঙে, তেমনি খাবার থেকেও জোগাতে হয় পর্যাপ্ত ক্যালরি। স্তন্যদানে বাড়তি ক্যালরি গ্রহণ করা সত্ত্বেও মায়ের ওজন কমবে। গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী নন, এমন একজন নারীর প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ ক্যালরি প্রয়োজন। সন্তান জন্মের পর সেটা আরও বেড়ে হয় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ ক্যালরি। তিন মাস পর কিছুটা ক্যালরি কমিয়ে ফেলতে হয়। আরও তিন মাস পর ক্যালরির পরিমাণ হবে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০। এই সময় শিশুর বয়স হয় ছয় মাস; অর্থাৎ সে বাড়তি খাবার খেতে শুরু করে। মায়ের দুধ কিন্তু ২ বছর পর্যন্তই চলবে। তাই মায়ের ওজন বাড়ার ভয় নেই।
নিত্যদিনের খাবার
শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ থেকে আমরা ক্যালরি গ্রহণ করি। স্তন্যদানের সময় একজন মাকে এই তিন ধরনের খাবারের পরিমাণই বাড়াতে হবে। ক্যালরির হিসাব সম্পর্কে খানিকটা ধারণা নেওয়া যাক। ১ কাপ বা ১০০ গ্রাম ভাত থেকে পাওয়া যায় ১০০ ক্যালরি। এক কাপের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ গমের আটা থেকে যে কটা রুটি তৈরি হয়, তা থেকে পাওয়া যায় ১০০ ক্যালরি। রান্না করা ২ টুকরা মাছ কিংবা মাংস (চর্বি ছাড়া ১০০ গ্রাম) থেকে পাওয়া যায় ১০০ ক্যালরি। ১৫০ মিলিলিটার দুধ থেকে পাবেন ১০০ ক্যালরি, ১টি ডিম থেকেও পাবেন তা-ই। ২ চা-চামচ তেল থেকেও ১০০ ক্যালরি পাওয়া যায়। ১টি কলায় (১০০ গ্রাম) পাবেন ৯৫ ক্যালরি। ১টি মাঝারি আলু (৫০ গ্রাম) থেকে পাবেন ৫০ ক্যালরি, ১ কাপ (১০০ মিলিলিটার) পাতলা ডাল থেকেও ৫০ ক্যালরি। অবশ্য ঘন ডালে ক্যালরির পরিমাণ বেশি।