ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের যেই জরাজীর্ণ দশা সমকালের সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যেন রবীন্দ্রসংগীতের সেই চরণের সার্থক রূপায়ণ– ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’। বিশেষত গাজীপুরের শ্রীপুর হইতে ময়মনসিংহের উমেদনগর স্টেশন পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার রেলপথে বিভিন্ন স্থানে ফিশ বোল্ট, স্লিপার, হ্যান্ডল ক্লিপ ও পাথর না থাকিবার চিত্র রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সর্বশেষ রবিবার রাত্রে জামালপুর হইতে ছাড়িয়া আসা অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের তিনটি বগি ত্রিশালের ফাতেমানগর এলাকায় লাইনচ্যুত হইবার পর প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাইতেছে, ঐ সংযোগে নাটবোল্ট পর্যন্ত ছিল না। আমাদের প্রশ্ন, এই পথে প্রতিদিন ২৮ জোড়া ট্রেন তাহা হইলে চলাচল করিতেছে কীসের ভরসায়?
রেলপথটির ঐ অংশ দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলীর এই বক্তব্যও কম বিস্ময়কর নহে– গত ১৪ মাসে তিনবার চাহিদাপত্র পাঠানো হইলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও উপকরণ মিলিতেছে না। এহেন পরিস্থিতিতে সামান্য নাটবোল্টের অভাবে রেলপথ ক্রসিং ‘তার’ দিয়া বাঁধিয়া রাখিতে হইতেছে। রেলপথটির পরিস্থিতি বিবেচনায় কোথাও কোথাও যেইভাবে গতি মাত্র ১০ কিলোমিটারে রাখিবার নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছে, উহা নেহাত অবৈজ্ঞানিক সমাধান। যেই কারণে ছোটখাটো দুর্ঘটনা থামিয়া নাই। এই প্রশ্ন অমূলক হইতে পারে না– রেল কর্তৃপক্ষ কি বৃহৎ দুর্ঘটনার অপেক্ষায় রহিয়াছে?
আমরা মনে করি, রবিবারের দুর্ঘটনাটি ‘ওয়েকআপ কল’ মাত্র। অবিলম্বে রেলপথটি সংস্কার করা না হইলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রহিয়াই যাইবে। উহা ‘ডুয়েলগেজ’ করিবার যেই দাবি স্থানীয়রা তুলিয়াছেন, তাহাও সংগত। রেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন যদিও তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিন করিয়াছে; আগেই বলিয়া দেওয়া যাইতে পারে, রেলপথটিতে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সংস্কারহীনতা। আমরা জানি, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক তৃতীয় মেয়াদে রেলপথে মনোযোগ, বরাদ্দ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাইয়াছে। পৃথক মন্ত্রণালয় গঠিত হইয়াছে; অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ সম্প্রসারিত হইতেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে উহার প্রতিফলন নাই কেন? স্মর্তব্য, বিবিধ বিড়ম্বনা সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক যাত্রী এখনও রেল ভ্রমণে উৎসাহী মূলত নিরাপত্তা বিবেচনা করিয়া। তথায় যদি খোদ রেললাইনই ঝুঁকিপূর্ণ থাকিয়া যায়, তাহা হইলে তো সকলই গরল ভেল!