রেফারির শেষ বাঁশির পর সিডনি স্টেডিয়ামে একটি বিরল দৃশ্য দেখা গেল। বিশ্বকাপ জয়ের অপার আনন্দে মশগুল পুরো স্পেন দল, অথচ তখন এক কর্মকর্তাকে নিয়ে মাঠের এক পাশে আপন মনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন কোচ হোর্হে রদ্রিগেজ। বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভের কারণেই হয়তো নিজেকে আনন্দ উদযাপন থেকে দূরে রেখেছিলেন কোচ। স্পেনের এই বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে জড়িয়ে আছে অনেক বিদ্রোহ, অপমান, প্রতিবাদ, দুঃখ, কষ্টের গল্প। আর এসবের কেন্দ্রবিন্দুতে কোচ রদ্রিগেজ। মাত্র এক বছর আগে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে জাতীয় দল থেকে সরে গিয়েছিলেন ১৫ নারী ফুটবলার। তাদের মধ্য থেকে মাত্র তিনজনকে বিশ্বকাপ দলে ফিরিয়ে এনেছিলেন কোচ। সেরা ১২ ফুটবলারকে ছাড়াই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন তিনি। সব প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্বকাপ জিতে কোচ রদ্রিগেজ জানালেন, বিদ্রোহের সেই কঠিন সময়টা তাদের আরও শক্ত করেছে। সেই দৃঢ় মানসিকতাই তাদের ছিল বিশ্বজয়ের অন্যতম শক্তি।
সেই বিদ্রোহের রেশ বিশ্বকাপেও স্পেন দলে বেশ ভালোমতোই ছিল। ফাইনাল শুরুর আগে যখন স্টেডিয়ামের মাইকে খেলোয়াড় ও কোচদের নাম ঘোষণা হচ্ছিল, তখন রদ্রিগেজ বলতেই পুরো স্টেডিয়াম দুয়ো ধ্বনি দেয়। অবশ্য দর্শকরা তো পরের বিষয়, নিজের দলের খেলোয়াড়রাই রদ্রিগেজকে পছন্দ করেন না। ফাইনাল জেতার পর তাও খানিকক্ষণের জন্য দলের সঙ্গে তাঁকে উদযাপন করতে দেখা গিয়েছিল; সেমি ও কোয়ার্টার জেতার পর ফুটবলাররা তাঁর সঙ্গে হাত পর্যন্ত মেলাননি। স্পেন দলের বেশির ভাগ সদস্যই কোচ রদ্রিগেজকে পছন্দ করেন না। তাদের দাবি, অতিরিক্ত পরিশ্রম ও মানসিক চাপ তৈরি করেন তিনি। যে কারণে তাদের পক্ষে স্বাভাবিক খেলাটা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে রদ্রিগেজ জারি করেছিলেন, জাতীয় দলে থাকাকালে হোটেলে অবস্থানের সময় মাঝরাত পর্যন্ত দরজা বন্ধ করা যাবে না। কে কী করছে, সেটা যেন তিনি চেক করতে পারেন; সে জন্যই এ ব্যবস্থা। এ নিয়মের প্রতিবাদেই ১৫ জন জাতীয় দল থেকে সরে গিয়েছিলেন।