বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এখনো ‘সফট লোন’ পাওয়া গেলে আমরা নিতে আগ্রহী হই, কিন্তু আমাদের বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এখন ‘সাপ্লায়ারস ক্রেডিট’। সাপ্লায়ারস ক্রেডিটের অসুবিধা হলো জোগানদাতারা প্রকল্পের প্ল্যান্ট, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ঋণ হিসেবে দেওয়ার সময় প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজার দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম ধরে ঋণের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয়। উপরন্তু সাপ্লায়ারস ক্রেডিটের সুদের হারও সফট লোনের সুদের হারের চেয়ে বেশি, ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও কম থাকে।
আরও গুরুতর বিষয় হলো, সাপ্লায়ারস ক্রেডিটে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ব্যবসায়ী ও আমলাদের ‘মার্জিনের হার’ অনেক বেশি হয়ে থাকে। সে জন্য সাপ্লায়ারস ক্রেডিটকেলুটপাটের অর্থনীতির সবচেয়ে বহুল-ব্যবহৃত মেকানিজম হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ক্রমেই জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ প্রতিবছর বাড়ানো হচ্ছে। ফলে ২০১৪ সালে আইএমএফের পরিসংখ্যান মোতাবেক যেখানে বাংলাদেশ সরকারের ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তা বেড়ে জিডিপির ৪২ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে মোট ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ১৬৭ বিলিয়ন ডলারে। যা বর্তমান ডলারের হিসাবে প্রায় ১৮ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৫ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত আর ৭১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক রকমের বেশি হয়ে গেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ধরনের ঋণের কিস্তি এবং সুদ পরিশোধ অতি দ্রুত অর্থনীতির জন্য বোঝা হিসেবে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি প্রশাসন খাতে ব্যয়-বরাদ্দের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ ব্যয়-বরাদ্দ রাখতে হয়েছিল সরকারি ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে, মোট ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর জন্য প্রস্তাব রাখা হয় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে হয়তো ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সরকারকে মাত্রাতিরিক্ত সাপ্লায়ারস ক্রেডিট নেওয়ার ব্যাপারে সাবধান করার জন্যই কলামটি লেখা।