সরকারি চাকুরে নন, এমন ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। বয়সটা ২৫ থেকে ৬০ হওয়া দরকার হলেও প্রাথমিকভাবে এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। সরকারি বিজ্ঞাপনের ভাষ্যে সর্বজনীন পেনশন হয়ে উঠেছে ‘কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পাবেন’ টাইপের বিমা অথবা সঞ্চয়ী প্রকল্প! অর্থাৎ বেসরকারি জীবনবিমা এবং ব্যাংকের সঞ্চয়ী ডিপিএসের মিশেলে তৈরি মুনাফাভিত্তিক লাভজনক আর্থিক প্যাকেজ। বাস্তবে সর্বজনীন পেনশনের দর্শন অনেক বেশি গভীর।
সর্বজনীন পেনশনের মূল উদ্দেশ্য কর্মে অক্ষম বয়সে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান কিংবা জমাকৃত অর্থের ওপর সুদের শতাংশে লভ্যাংশ গুনে বাড়তি অর্থ ফেরত দেওয়া নয়; বরং উদ্দেশ্য অবসরকালে বাঁচার মতো ন্যূনতম অর্থ সুরক্ষা হিসেবে প্রদানের নিশ্চয়তা। সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার দর্শন হচ্ছে ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করা, মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করা এবং অবসরপ্রাপ্ত মানুষের আর্থিক কষ্টের ঝুঁকি কমাতে অবসরের পরে পর্যাপ্ত ‘আয় প্রতিস্থাপন’ করা।
সরকার-ঘোষিত পেনশন কর্মসূচি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ১৮ বছর বয়সে যুক্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক করতে লেগে যায় প্রায় ২৫ বছর, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ বছর। দেশে প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষিত যুবক স্থায়ীভাবে বেকার, যাঁরা সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি করছেন। পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে বয়স যত বাড়বে, আনুপাতিক হারে কমতে থাকবে সুবিধাও, এটাই স্বাভাবিক। যে কেউ তঁার মোট জমাকৃত চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ টাকা পেনশন পাবেন। প্রশ্ন হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি যেভাবে বাড়ছে, তাতে পেনশন স্কিম যে পরিমাণ টাকা ফিরিয়ে দেবে বলে দাবি করছে, তার মূল্যমান তখন কত দাঁড়াবে? বর্তমানের চেয়ে তাঁর ক্রয়ক্ষমতা কি কম হবে?